চলতি ধান-চাউল সংগ্রহ মৌসুমে নির্ধারিত সময় শেষ হলেও সাতক্ষীরার ৯টি খাদ্য গুদামের মধ্যে ৮টিতেই কোন ধান জমা পড়েনি। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ধান-চাউল সংগ্রহ অভিযান শেষ হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু জেলার ৮টি খাদ্য গুদাম কোন ধান সংগ্রহ করতে না পারায় অভিযানের মেয়াদ বাড়ানো হয় ৭ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এর পরও এক কেজিও ধান ক্রয় করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে বাজারে ব্যবসায়িদের কাছে মূল্য বেশি পাওয়ায় চাষীরা সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ দেখায়নি বলে জানান গুদাম কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ধান-চাউল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মাসে। যার মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সাতক্ষীরা জেলার ৯টি সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৪১২ মেট্রিক টন। তবে নির্ধারিত সময়ে শুধুমাত্র কলারোয়া খাদ্য গুদামে ১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ হলেও বাকি ৮টি খাদ্যগুদামে কোন ধান সংগ্রহ হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আমন মৌসুমে ৭ হাজার৬৮ মেট্রিক টন চাউল এবং ৪ হাজার ৪১২ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হলেও ৭ মার্চ পর্যন্ত ১ মেট্রিক টনের বেশি ধান ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ধান ও চাল সংগ্রহ শুরুর আগে প্রতিটি ইউনিয়নে নোটিশ বোর্ড এবং মাইকিং করা হয়েছিল। ধান সংগ্রহ ৭ মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধানের মূল্য ২৮ টাকা এবং চালের মূল্য ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সদর উপজেলা ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের হাচিমপুর গ্রামের মহিতোষ ঘোষ একজন প্রান্তিক কৃষক। তিনি বলেন, আমন মৌসুমের ধান বাড়ি থেকেই বিক্রি করেছিলাম। সরকারি খাদ্য গুদামের চেয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বেশি দিয়েছিল।
তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান ও বিকাশ মজুমদার বলেন, খাদ্য গুদামে দেওয়া ধান একটু কম শুকানো হলে নিতে চায় না। তখন ধান আবার ফেরত আনতে হয়। এছাড়া পরিবহন খরচ, গুদামের শ্রমিকদের মজুরীসহ আরো অনেক বাড়তি খরচ আছে। তাছাড়া গুদামে ধান দিলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হয়রানী পেতে হয় ও সময় লাগে। কাজ ছেড়ে টাকার জন্য অফিসে ঘোরার সময় নেই। আর বাজারে যেয়ে ধান বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। এবং কিছু পাইকারী ব্যবসায়ীরা ধান ঝাড়া ও পরিস্কারের পর বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যান। এ বছর সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের মূল্য বেশি ছিল। তাই এবছর ধান গুদামে না দিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক মিল মালিক বলেন, সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারেই ধান ও চাউলের মূল্য বেশি। আমন মৌসুমে বাজারে পর্যাপ্ত ধানও ছিলনা। বেশি দামে ধান কিনে গুদামে কম দামে চাল সরবরাহ করবো কিভাবে?
কলারোয়া উপজেলা গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীন বলেন, ডিসেম্বরে উদ্বোধনের দিন ১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছিলাম। এরপর আর কোনো ধান আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি। আমি কৃষকের সাথে কথা বলেছি। বাইরের বাজারে ধানের ধাম বেশি থাকায় কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয় করতে আগ্রহ দেখায়নি।
সাতক্ষীরা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা এসএম মন্জুররুল আলম বলেন, এ জেলায় সব থেকে বড় ধানের মোকাম ঝাউডাঙ্গা বাজার সেখানে যেয়ে সরাসরি কৃষকদের সাথে কথা বলে খাদ্যগুদামে ধান দেওয়ার আহবান করি। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় তারা গুদামে ধান আনতে রাজি হয়নি।
জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফফার বলেন, প্রথমধাপে আমরা যারা ধান ক্রয় করে চাউল বানিয়ে গুদামে দিয়েছিলাম তাদের লস হয়নি। তবে শেষে যারা গুদামে চাল দিয়েছেন তাদের লস হয়ে গেছে। এছাড়া সরকারি গুদামের চেয়ে বাইরে ধানের দাম বেশি পেয়েছে কৃষকরা। ফলে আমাদেরও এবছর ধান কিনতে হিমশিম খেতে হয়েছে। প্রতিবছর আমরা খাদ্য গুদামের সাথে চুক্তি করি। লসের কথা ভেবে যদি আমরা এবছর চাল না দিতাম তবে পরবর্তীতে খাদ্য গুদাম আমাদের সাথে আর চুক্তি করতো না। এজন্য লস হলেও এ বছর অনেক মিল মালিক খাদ্য গুদামে চাল দিয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা কমল চাকমা বলেন, লক্ষমাত্রার চেয়ে আমরা ২৭ হাজার ২.৪৯ মেট্রিক টন চাউল বেশী সংগ্রহ করেছি। সাতক্ষীরা সদর গুদামে এবার লক্ষমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহ হলেও অন্যান্য খাদ্য গুদামে লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি। এছাড়া কলারোয়া খাদ্য গুদামে ১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হলেও অন্যান্য গোডাউনে এক কেজিও ধান সংগ্রহ করতে পারিনি। কারন সরকারী দামের চেয়ে খোলা বাজারেই ধানের ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা। যে কারণে তারা সরকারি খাদ্য গুদমে ধান বিক্রি করেনি।
খুলনা গেজেট/ এসজেড