খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

সাতক্ষীরায় সাব রেজিষ্ট্রিটার সংকট, জমি রেজিষ্ট্রিতে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাব রেজিষ্ট্রিটার সংকটের কারণে সাতক্ষীরায় জমি ক্রেতা বিক্রেতাদের চরম ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে। জেলা সদর সহ সাত উপজেলার সাতজন সাব রেজিষ্ট্রারের পদ থাকলেও সেখানে অনধিক তিন জন সাব রেজিষ্ট্রার দিয়ে চলছে সরকারের অভ্যন্তরীন রাজস্ব উপার্জনের অন্যতম মাধ্যমটির কর্মযজ্ঞ। ফলে জমি ক্রয় বিক্রিতে প্রতিটি উপজেলায় সপ্তাহে মাত্র দুই থেকে তিনি দিন কাজ হয়ে থাকে। এতে করে ভোগান্তীতে পড়ছেন জমি ক্রেতা বিক্রেতারা।
বর্তমান সময়ে ভূমি সেবা এবং জমিজমা রেজিষ্ট্রেশন গতানুগতিক এবং সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর এবং বিধি বিধান মেনে হওয়ার ব্যবস্থা বিদ্যমান।

জমি ক্রেতা বিক্রেতা সহ ক্রয় বিক্রির সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জমি রেজিষ্ট্রেশনের শর্ত তথা খাজনা দাখিলা, দলিল, পচ্চা, ভোটার আইডি কার্ড, খতিয়ান, সরকারি ফি সহ আনুসাঙ্গিক অপরাপর বিধি যথাযথ থাকলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সাব রিজিষ্ট্রার যাচাই পরবর্তি জমি রেজিষ্ট্রি করেন। কিন্তু জেলার সাব রেজিষ্ট্রি অফিস গুলোর চিত্র যেন হাটের ভিড়, সাত উপজেলার কোনটি সপ্তাহে এক দিন আবার কোনটিতে সপ্তাহে দুই দিন বা তিন দিন জমি রেজিষ্ট্রি হচ্ছে। যে কারণে ক্রেতা বিক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতি, দিনের পর দিন অপেক্ষা, তার পর নির্দিষ্ট দিনে রেজিষ্ট্রি অফিসে উপস্থিত হয়ে সকাল হতে সন্ধ্যা, কোন কোন দিন রাত পর্যন্ত ভোগান্তী নিয়ে অপেক্ষা প্রহর শেষে জমি রেজিষ্ট্রি করে বাড়ি ফিরতে হয়।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, জমিজমা ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ জেলার বাইরে থেকে শুধুমাত্র রেজিষ্ট্রি কাজ সম্পন্ন করা জন্য আসেন। সাতক্ষীরার নাগরিক হলেও তারা কর্মসংস্থান বা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকাতে অবস্থান করেন। অন্যদিকে মহিলা ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ শ্বশুর বাড়ী অর্থাৎ স্বামীর বাড়ীতে অবস্থান করায সেখান থেকে জমি রেজিষ্ট্রির জন্য তাদের আসতে হয় সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রি অফিসে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে কাজ সম্পন্ন করতে না পেরে যথা সময়ে তারা গন্তব্যে পৌছাতে পারেন না। সাব রেজিষ্টারের অভাব থাকায় এভাবে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে সংশ্লিষ্ট সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে একসাথে শত শত ভুক্তভোগী, সেবা গ্রহীতা জমি ক্রেতা বিক্রেতারা উপস্থিতি হন। এসময় সেখানে স্বাস্থ্য বিধির কোন বালাই থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সময় মাইকের মাধ্যমে ক্রেতা বিক্রেতাকে ডাকতে হয়। এছাড়া জমি ক্রয় বিক্রির ক্ষেত্রে বরাবরই দালাল চক্র, জাল জালিয়াতি মহল এবং প্রতারক সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকে। যে কারণে এমন বেহিসেবি ভিড়, জটলা, কাজের দীর্ঘ সুত্রিতায় এলোমেলো পরিস্থিতিতে অতি সহজে জাল ও প্রতারক চক্র তাদের অশুভ কাজ সমাধা করতে পারে। ফলে ক্রেতা বিক্রেতা, স্বাক্ষী, সনাক্তকারী, জমির দাগ, খতিয়ান, পরিমান এর ক্ষেত্রে ক্রেতা বিক্রেতার প্রতারনার শিকার হতে পারেন। অবশ্য এমন ঘটনা হরহামেসাই ঘটে থাকে।

এছাড়া সাব রিজিষ্টারের সংকটকালীন সময় গুলোতে এক শ্রেনির দলিল লেখকসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রতারনা, দলির রেজিষ্ট্রিতে অধিক অর্থ আদায়, সরকারি চালানে কারচুপি, কোন কোন ক্ষেত্রে ভুয়া চালানে জমি রেজিষ্ট্রার ঘটনাও যে ঘটছে না বা ঘটবে না এমন নিশ্চয়তা কোথায়? আর নিকট অতীতে সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে এমন ঘটনা ঘটছে এবং তদন্তে প্রমান ও হয়েছে। গ্রামের সহজ সরল লোক যারা সরকারি ফি সম্পর্কে অবগত নন এমন ক্রেতা বিক্রেতাকে এক শ্রেনির দলিল লেখকরা হেবা, কোবলা, আমমোক্তার নামা, ঘোষনা পত্র, নাদাবি পত্র সহ জমি হস্তান্তর বিষয়ে সরকারি নির্ধারিত ফি অপেক্ষা অধিক ফি নিচ্ছে এমন ঘটনা প্রায় ঘটছে, আর এ ক্ষেত্রে অনৈতিকতার পাশাপাশি ভিড়ের সুযোগ নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। অতিরিক্ত ভীড় আর ভোগান্তীর সাথে সঙ্গী হতে পারে জমির শ্রেণি পরিবর্তন, দাগ খতিয়ান ভুল বা ইচ্ছাকৃত ভুল, বিলান, বাস্ত, ভিটা, বাড়ি ভিন্ন ভিন্ন সরকারি ফি থাকলেও জনবল সংকটের কারনে অনেক সময় এধরনের ভুল হতে পারে। এ সকল অঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে অধিক চাপ সৃষ্টি হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা হওয়া দলিল রেজিষ্ট্রি করা প্রয়োজন।

সূত্র আরো জানায়, অন্যান্য সরকারি অফিস গুলোর ন্যায় সাব রেজিষ্ট্রারদের কর্ম দিবস সপ্তাহে পাঁচ দিন। এ ক্ষেত্রে জেলার কোন কোন রিজিষ্ট্রি অফিসে কাজ হচ্ছে এক, দুই বা তিন দিন। জনসাধারণ সরকারের সব শর্ত পুরণ করেই রেজিষ্ট্রি অফিসে আসছে আর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকছে। দীর্ঘদিন যাবৎ সাতক্ষীরার সাব রেজিষ্টার সংকটে তার উপর সম্প্রতি শ্যামনগর এর সাব রেজিষ্টার ইসলামকাঠির সাব রেজিষ্ট্রার বদলি হওয়ায় সংকট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। জমিজমা বিক্রি করে নেহায়েত প্রয়োজনে, বিবাহ, হজ্বেগমন, বাড়ী তৈরী, বিদেশ গমন, পড়ালেখা খরচ, এক স্থানের জমি বিক্রি করে অন্য স্থানে জমি ক্রয় প্রভৃতি। অন্য দিকে অসুস্থ, বৃদ্ধরা তাদের উত্তরাধিকারীদের জমি দান করে। এ ক্ষেত্রে সময় মত প্রয়োজনে যদি জমি রেজিষ্ট্রি না করতে পারে তাহলে লক্ষ্য উদ্দেশ্য সফল হয় না, বরঞ্চ ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়। একই সাথে বৃদ্ধ ও অসুস্থরা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে অপেক্ষার প্রহর গুনতে অধিকতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে জেলা ব্যাপী জমি ক্রয় বিক্রেতাদের ভোগান্তী, বিরক্ত, বিব্রত এবং বিড়ম্বনার পাশাপাশি ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা রেজিষ্টার আব্দুল হাফিজের কাছে জনভোগান্তী ও সাব রেজিষ্টারের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে জেলায় সাব রেজিষ্টার কর্মরত আছেন মাত্র তিন জন। এই তিনজনকে দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। তবে জনভোগান্তীর বিষয়টি স্বীকার করলেও সরকারের রাজস্ব উপার্জনে সামান্য ঘাটতি হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!