সাতক্ষীরায় কর্মস্থলে টানা অনুপস্থিতিসহ শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারী আচরণের জন্য এক শিক্ষিকাকে শোকজ করে রীতিমত বিপাকে পড়েছেন শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রাফিজ মিয়া। বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পরিবেশ নিশ্চিতের চেষ্টায় ওই কর্মকর্তা এখন উল্টো অভিযুক্ত শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীন সহ প্রভাবশালী এক শিক্ষক নেতার রোষানলের শিকার।
দীর্ঘদিনেও শোকজের জবাব না দেয়া ওই শিক্ষিকা সম্প্রতি তার সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে। এমনকি কয়েক মাস আগে ওই কর্মকর্তা কর্তৃক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার দাবি করে তিনি সংসদ সদস্যসহ উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে এঘটনায় রোববার (২২ জানুয়ারি) সাড়ে ৯টায় শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. নাছিমা খাতুন সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে এই তদন্ত করেন। এসময় অভিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রাফিজ মিয়া ও অভিযোগকারি শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীনসহ অন্তাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এসময় সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোধুলি বেগম তার সাথে ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার ৭৯নং অন্তাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীন পূর্বানুমতি ছাড়া ২১ মার্চ থেকে টানা তিন দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এসময় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রাফিজ মিয়া বিদ্যালয় পরিদর্শনে যেয়ে তাকে না পেয়ে ২৪ মার্চ ওই শিক্ষিকাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ২৫ মার্চ পিয়ারী পারভীন বিদ্যালয়ে যেয়ে হাজিরা খাতায় দেয়া লাল কালির দাগ মুছে তাতে স্বাক্ষরের সুযোগ দিতে প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করেন। এসময় আবদার রক্ষা না হওয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠান প্রধানকে গালমন্দ করেন এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ শিক্ষকের দ্বারস্থ হন। এক পর্যায়ে শিক্ষক নেতৃবৃন্দসহ অপরাপর শিক্ষকদের উপস্থিতিতে গত ২৮ জুন ওই শিক্ষিকা শিক্ষা অফিসে যেয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে বিষয়টি মিটিয়ে নেয়।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও দিপংকর মন্ডলসহ কয়েকজন জানায়, ৩০ অক্টোবর শ্রেণিকক্ষে বসে মোবাইল ফোনে ফেসবুকে যুক্ত হওয়ার পর ৮ নভেম্বর অনলাইন পরিদর্শনে বিদ্যালয়ে পিয়ারী পারভীনের অনুপস্থিতির বিষয়টি আবারও কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে পুনরায় তাকে শোকজ করা হলে শিক্ষা অফিসারের দপ্তরে যেয়ে প্রকাশ্যে তাকে গালিগালাজ করেন ওই শিক্ষিকা। এসময় তার সাথে থাকা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ ‘তার শিক্ষিকা শোকজের জবাব দিবে না’-উল্লেখ করে ক্ষমতা থাকলে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন শিক্ষা অফিসারের প্রতি।
এদিকে শিক্ষা অফিসারের সাথে দ্বন্দ্বে সতীর্থদের সমর্থন না পেয়ে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের অপর সহকর্মীদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীনের বিরুদ্ধে। তিনি বহিরাগত যুবকদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের অফিসে তান্ডব চালানোর পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের প্রবেশপথে নারী সহকর্মীকে আটকে হেনস্থা করেছেন বলেও অভিযোগ।
সাধারণ শিক্ষকরা জানায়, শোকজের জবাব না দিয়ে শিক্ষা অফিসারকে চ্যালেঞ্জ জানানো ছাড়াও প্রকাশ্যে অপদস্থ করার ক্ষেত্রে শিক্ষক সমিতির এক নেতার ভুমিকা রয়েছে। সরকারি বরাদ্দ, ডেপুটেশনসহ রমরমা বদলী বাণিজ্যে জড়িত সিন্ডিকেট শিক্ষা অফিসারকে ‘বশ’ করতে না পারায় শোকজ পাওয়া শিক্ষিকাকে ব্যবহার করছেন তিনি।
এবিষয়ে শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীন জানায়, তার সাথে খারাপ আচারণ করায় তিনি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। শিক্ষক নেতা মামুনুর রশিদ তাকে ইন্ধন দিচ্ছে না-দাবি করে তিনি বলেন, তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে অন্যরা সাহস পাবে না বলেই তিনি এসব করছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রাফিজ মিয়া জানান, প্রথম দফায় শোকজসহ ও বেতন আটকে দেয়া হলেও ২০/২২ জন শিক্ষক নেতার উপস্থিতিতে পিয়ারী পারীভন নিজের ভুল বুঝতে পেরে বিষয়টি মিটিয়ে নেন। তবে দ্বিতীয় দফায় আবারও একই ধরনের অপরাধের কারণে তাকে শোকজ করার পর নিজেদের অবৈধ কাজের সমর্থন না পেয়ে ক্ষুব্ধ একটি সিন্ডিকেটের প্ররোচনায় ওই শিক্ষিকা তার বিরুদ্ধে মানহানিকর নানা বিষোদগার করছেন। শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীন এর বিরুদ্ধে কর্মস্থলের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকসহ কর্মচারীদের সাথে প্রায় অভিন্ন দুর্ব্যবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এঘটনায় রোববার শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. নাছিমা খাতুন সরেজমিনে শ্যামনগরে এসে ঘটনার তদন্ত করেছেন। তিনি সকলের সাথে কথা বলেছেন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এসময় শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীন এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদও সাক্ষ্য প্রদান করেন বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এসজেড