দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে মানুষের অভাব ও বেকারত্ব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলেই হচ্ছেন এর নির্মম শিকার। চরম দরিদ্র অবস্থা সাথে লাগামহীন বাজার দর মানুষকে যখন দিশেহারা করে দিচ্ছে তখন নতুন কোনো উপায়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন বৃদ্ধ থেকে যুবরা। ঠিক তেমনই একটা পরিস্থিতি থেকে উঠে আশা একজন সফল উদ্যোক্তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেবাশীষ সরদার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দাকোপ উপজেলার পানখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড খোনা গ্রামের প্রান্তিক চাষি নারায়ণ চন্দ্র সরদারের পুত্র দেবাশীষ সরদার(৪৫)। নারায়ণ চন্দ্র সরদারের এক সময় ধান ও অন্য ফসল লাগানোর উপযুক্ত ১৬ বিঘে জমি ছিল। তখন তাঁদেরআর্থিক অবস্থাও ছিল মেটামুটি ভালো। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! বাড়ির ঠিক দক্ষিণ পার্শে প্রমত্তা ঢাকি নদীর ভাঙ্গনে ভাঙতে ভাঙতে তার বসতভিটাসহ ৮ বিঘা জমি নদী ভাঙ্গনে চলে যায়। কালো মেঘের মত আস্তে আস্তে সংসারে অভাব অনটন প্রবেশ করতে থাকে। কে কি করবে ভেবে উঠতে পারে না। দেবাশীষও বাড়ির কাজের ফাঁকে ভাবতে থাকে বাড়তি আয়ের জন্য আর কি কাজ করা যায়। তার শ্বশুর বাড়ি হলো পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালি ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে।
তিনি শ্বশুর বাড়িতে একদিন এসে দেখেন তার শ্বশুর মাত্র ৩ কাঠা জায়গায় ১২২০ টি শোলমাছ বড় করেছেন যার ওজন ৬’শ থেকে ৭’শ গ্রাম। মাছগুলো বিক্রয় হয়েছিল সেদিন ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায়। সেগুলোর চাষ করতে তাঁদের ব্যায় ছিল ৮০ হাজার টাকা।
শ্বশুর বাড়িতে শোলমাছের লাভজনক ঘের দেখে দেবাশীষ উদ্বুদ্ধ হন এবং সেখান থেকে এই মাছ চাষের অভিজ্ঞতা নেন। তারপর বাড়িতে ফিরে দেবাশীষ তাঁর স্ত্রী সুপ্রিয়া সরদারের সাথে পরামর্শ করে একমত হন যে শোল মাছের ঘের করা হবে।তারপর বৈশাখে ৫০ হাজার টাকা ব্যায় করে ৮ কাঠা জমিতে একটি মাছের ঘের শোলমাছ চাষের জন্য প্রস্তুত করেন।
জৈষ্ঠ্যমাসের শেষ সপ্তাহে তিনি ৪ হাজার ৫০টি শোলমাছের পোনা ঘেরে ছেড়ে দেন এবং নিয়মিত খাবার দিতে থাকেন। মাছগুলোর ক্রয়মূল্য ছিল ৮ হাজার টাকা।মাছের পরিচর্যা হিসেবে,ঘেরের পানি পরিস্কার রাখার জন্য মাঝেমধ্যে পানি সরা-ভরা করানো হয়। মাছ সুস্থ ও নিরোগ রাখতে প্রতি ১৫ দিন অন্তর পুকুরে ঔষধ ছিটানো হয়। বর্তমানে মাছের বয়স ২ মাস ৯ দিন। মাছের ওজন হয়েছে ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম। খাদ্য হিসেবে দৈনিক এখন ৪০ কেজি তেলাপিয়া টুকরো টুকরো করে দুইবার দেওয়া হচ্ছে। যার কারনে দৈনিক খরচ হচ্ছে ২ হাজার টাকা।
দেবাশীষের মাছের খামারটি দেখতে প্রতিদিন অনেকে এসে ভীড় জমায়। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৩ সালের সফল মৎস্য চাষি হিসেবে দেবাশীষ সরদারকে উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে।
শোলমাছ চাষের এ নতুন উদ্যোক্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, মাছগুলো কার্তীক মাসে যখন বিক্রয় করবো তখন এর ওজন ৬ থেকে ৭শত গ্রাম করে হবে। এর বিক্রয় মূল্য হবে ১২ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা। ততদিন আমার ব্যয় হবে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। মাত্র ৫ মাসে শোল মাছের চাষ করে এটা সম্ভব।
এখন থেকে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন দেবাশীষ সরদার। আর তাঁর মাছের ঘের দেখে মিষ্টি পানিতে শোল মাছ চাষের স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই।
খুলনা গেজেট/ টিএ