গ্রীষ্মকালীন শিম ও টমেটো চাষে সাফল্যের মুখ দেখছেন যশোরের শার্শার চাষিরা। অসময়ের এ ফসল যেন সোনার হরিণ। অল্প জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় তাদের মুখে আনন্দের হাসি।
কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য কার্তিকের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) পর্যন্ত বীজতলায় চারা তৈরি করেন কৃষকরা।
কার্তিকের শেষ সপ্তাহ থেকে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ (নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত ২০-২৫ দিনের চারা লাগানো যায়। জমি চাষ সম্পন্ন হলে ভূমি থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে মাচা তৈরি করে চারপাশে ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। চারা লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে পানি দিতে হবে। সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেন্টিমিটার এবং চারার দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার।
বাহার, বিনা টমেটো-৪, বিনা টমেটো-৫, বারি টমেটো-২ বা রতন, বারি টমেটো-৩, ৪, হাইব্রিডের মধ্যে সবল, মিন্টু, বারি টমেটো-৫ খুব ভালো ফলন দিচ্ছে।
জাতভেদে চারা লাগানোর ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পাকা টমেটো সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছ থেকে সাত থেকে আটবারও টমেটো পাচ্ছেন কৃষকরা। টমেটোর ফলন প্রতি শতাংশে ৮০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
শার্শা উপজেলায় পলি শেড আর নিচে বেড করে টমেটোর চাষ হচ্ছে। বাঁশের মাচায় ঝুলছে শিমের থোকা থোকা ফুল। ভালো ফলন এবং বাজারে পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাবেন বলে মনে করছেন কৃষকরা।
উপজেলার শ্যামলাগাছি, নারায়ণপুর, কাশিপুর গ্রামের মাঠে গ্রীষ্মকালীন শিম ও টমেটো দেখা যাচ্ছে এখন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অসময়ের এ সবজিতে সফলতার মুখ দেখছেন চাষিরা। গত সপ্তাহে বেনাপোল ও নাভারনের কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি শিম ৭৫-৮০ টাকা এবং টমেটো ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে।
শার্শার ডিহি ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের চাষি রহমান মিয়া জানান, প্রতি বিঘা শিম চাষে খরচ প্রায় লাখ টাকা, টমেটোর বিঘা প্রতি খরচ একটু বেশি হলেও বাজার ভালো থাকলে খরচের দ্বিগুণ লাভ হয়।
বেনাপোলের নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক আবেদিন জানান, বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করে গত বছর এক বিঘা জমিতে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করেন তিনি।
শার্শার কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, ‘যশোরের চাষিদের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের আগ্রহ বাড়ছে। এতে একদিকে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি অসময়ে বাজারে নতুন সবজি পাচ্ছেন ক্রেতারা। এ বছর শার্শার ২৭ একর জমিতে শিম ও ৩১ একর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। আশা করছি আগামী বছর আরও বেশি জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি হবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম