দীর্ঘ ১২ বছর পর অনুষ্ঠিত হবে বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচন। আগামীকাল সোমবার (১৭ জুলাই) সকাল ৮ টা থেকে বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচন শুরু হবে। যথাসময়ে নির্বাচন না হওয়ায় এই নির্বাচনটি এখন সবার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।
২৬ জুন প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে ওঠে গোটা পৌর এলাকা। নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারণায় গিয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। নির্বাচনী ইশতেহারে সে কথাগুলো ব্যক্ত করেছেন প্রার্থীরা। সব কিছু শেষে এখন চলছে ভোট প্রদানের চিন্তা ভাবনা। সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন কমিশনার। প্রতিটি কেন্দ্রে সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর সমন্বয়ে ভ্রাম্যমান টীম, ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নির্বাচন কমিশনারের পর্যবেক্ষক টিম থাকবে ভোট কেন্দ্রে।
২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি বেনাপোল পৌর সভার ১ম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় নৌকা প্রতীকের আওয়ামীলীগের প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী নাজিম উদ্দিনকে হারিয়ে। অবশ্য এবারে বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনে না এলেও জমে উঠেছে নির্বাচন।
প্রথম শ্রেনির এ পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোটারদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। পোস্টার ও মাইকের শহরে পরিণত হয়েছে বেনাপোল পৌরসভা। শেষ আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরম ও মাঝে মধ্যে বৃস্টি উপেক্ষা করে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা কাঁকডাকা ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত অবধি দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। নিজেদের যোগ্য হিসেবে তুলে ধরে লিফলেট দিয়ে ভোট চেয়েছেন।
নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ৩ জন প্রতিদ্বন্দিতা করলেও শেষ মুহুর্তে এসে শনিবার (১৫ জুলাই) রাত ৯ টার দিকে আ’লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক হোসেন উজ্জল তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগ অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নৌকার প্রার্থীর সমর্থনে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন দুই জন মেয়র প্রার্থী। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে নাসির উদ্দীন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন।
উপজেলাসহ জেলার আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পথসভাসহ ভোটারদের কাছে কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন নৌকার প্রার্থী নাসিরের সমর্থনে। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমান সজন মোবাইল প্রতীক নিয়ে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনে কাউন্সিলর প্রার্থী ১৫ জন ও ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিল প্রার্থী ৪৭ জন। কাউন্সিলররা কেউ কেউ দলীয় ভাবে প্রচার প্রচারনা করছেন।
তবে মেয়র নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী নাসির উদ্দীন ও মোবাইল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমান সজনের মধ্যে। ভোটারদের সহানুভূতি পাওয়ার আশায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও সেগুলোর সমাধান নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন ভোট চাইতে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন বেনাপোল পৌরবাসী ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিল। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দলের হয়ে কাজ করেছি। স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে প্রার্থী করেছেন। দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে মাঠে নেমেছি। আশা করছি পৌরবাসী স্বতঃর্স্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবেন। নির্বাচিত হলে পৌরসভা একটি সেবা কেন্দ্রে পরিণত করা হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়িয়েছি। প্রচুর সমর্থন পেয়েছি। আশা করছি, মেয়র হিসেবে আমি নির্বাচিত হবো। বেনাপোল পৌরসভার সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে পারলে বেনাপোলবাসীর জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধি করা সম্ভব। বেনাপোলবাসীর সেবা করার সুযোগ পেলে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সাথে নিয়ে বেনাপোল পৌরসভার উন্নয়নের কাজ করবো। হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে। পৌরসভায় বসবাসরত দরিদ্র মানূষের কল্যাণে সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে। বেনাপোলবাসীর জন্য একটি সন্ত্রাসমুক্ত পৌরসভা উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে দুই জন প্রার্থী, সাধারণ ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪৭ জন প্রার্থী ও সংরক্ষিত ৩টি মহিলা আসনে ১৫ জনসহ মোট ৬৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১১টি গ্রাম/মহল্লা নিয়ে গঠিত এ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩০ হাজার ৩৮৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
যশোর জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মো: আনিছুর রহমান বলেন, বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচনী ২০২৩ এর তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা বাস্তবায়নের শার্শা উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। বেনাপোল পৌরসভায় আগামী ১৭ জুলাই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনারের পর্যবেক্ষক দল থাকবে ভোট কেন্দ্রে। ইতোমধ্যে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে ভোট কেন্দ্রে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন ফাঁকফোকর রাখা হবে না বলে জানান তিনি।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দল-মত নয়, যারা সৎ ও নির্ভীক এবং যার মাধ্যমে পৌর এলাকার উন্নয়ন হবে, সে ধরনের প্রার্থীকে তারা ভোট দেবে। ভোটাররা পৌর এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, ড্রেনেজ নির্মাণ, ডাস্টবিন নির্মাণ ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান চান। তবে অনেকে মনে করেন আওয়ামীলীগের নাসির উদ্দিনের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। নির্বাচনী লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে হবেন বেনাপোল ‘পৌর পিতা’ এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শেষ হাসিটা কে হাসবে, সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ১৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত।
খুলনা গেজেট/এসজেড