যশোরে জনপ্রতিনিধিদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইনের অপসারণ দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোর পৌরসভায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি তোলেন পৌর কাউন্সিলর ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং জেলা পরিষদের কয়েকজন সদস্য। তাদের দাবি মানা না হলে সংবাদ সম্মেলন থেকে কর্মবিরতিরও ঘোষণা দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন যশোরের জনপ্রতিনিধিদের নানাভাবে হয়রানি ও সম্মানহানি করছেন। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিবর্তে রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের অপসারণ না করলে জনপ্রতিনিধিরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন। একইসাথে লাগাতার কর্মবিরতি করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী অপু। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পুলিশ সুপার একটি পক্ষে অবস্থান নিয়ে অন্য পক্ষের জনপ্রতিনিধিদের জনসমুক্ষে সম্মানহানি করছেন। গত কয়েকদিন ধরে যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলন, শাহেদ হোসেন নয়ন, সাহিদুর রহমান রিপনসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির অফিস পুলিশ ভাঙচুর করেছে। আর গতপরশু রাতে সুনির্দিষ্ট মামলা না থাকলেও কাউন্সিলর মিলনকে আটক করে অমানষিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের এ অপতৎপরতার মাধ্যমে প্রকৃত যারা অপরাধী, সন্ত্রাসী তাদের আড়াল করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। চুরি, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি বেড়েছে। খুনের মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। এসব ঘটনার অধিকাংশ সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। কিন্তু সেই ফুটেজ অনুযায়ী আসামিদের আটক না করে অন্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রতিনিধিরা আরো বলেন, গত বছরের ৬ নভেম্বর যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার নিয়মতান্ত্রিকভাবে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু তিনি যশোর ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না। আগে দেখা গেছে পুলিশ সুপারের পদোন্নতি হলে তিনি অন্যত্র সেই পদে যোগদান করেছেন। কিন্তু পদোন্নতির তিন মাসের বেশি সময় পার হলেও বর্তমান পুলিশ সুপার অন্যত্র যোগদান করেননি। উল্টো যশোরে থাকার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যশোর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, জেলা পরিষদ সদস্য জবেদ আলী, পৌর কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল, রাজিবুল আলম, উপশহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু, হৈবতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক, লেবুতলা ইউপি চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন, চুড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন দফাদার, রামনগর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ, ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসন এবং নরেন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ।
এদিকে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন জানিয়েছেন, মদ্যপ অবস্থায় আটক ও মদ উদ্ধার ঘটনায় কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলনসহ চারজনকে আটক এবং মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছে। পুলিশের নিয়মিত সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে একটি মহল। তদের উপর কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ যা বলছেন তা অযৌক্তিক, পুলিশি কাজে বাধা দেয়ার শামিল। মানুষের জানমাল রক্ষায় পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ালে পুলিশ কাউকে বরদাস্ত করবে না।
খুলনা গেজেট/কেডি