যশোরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে একশ’ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২০৩ জন ও মারা গেছেন চারজন। যশোর জেনারেল হাসপাতালের রেড ও ইয়েলো জোনে প্রতিদিনই বাড়ছে ভর্তি রোগীর সংখ্যা।
এ পরিস্থিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ৫০ শয্যার আরও একটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কাজে সহযোগিতা করছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের সাজেদা ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি যশোরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতালের করোনা ইউনিট পরিচালনায় সহায়তা করবে।
নতুন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ শহরের জনতা হাসপাতালকে বেছে নিয়েছে। এ বিষয়ে জনতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আক্তারুজ্জামান ও সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন।
সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, বৃহস্পতিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে ৩৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে একশ’ ৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদিকে, যশোর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯৩ জনের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যবিপ্রবিতে পরীক্ষায় মাগুরা ও নড়াইলে আরো ৯ জনের ফলাফল পজিটিভ হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় আরো চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার নয়শ’ ৯০ জন। সুস্থ হয়েছে ছয় হাজার সাতশ’ ৪০। মৃত্যু হয়েছে একশ’ জনের।
যশোর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, শহরের রেলগেট এলাকার মনোয়রা বেগম (৬৫), উপশহর এলাকার পাপিয়া খাতুন (৬০) ও চাঁচড়ার জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৮)। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন হাসপাতালের ইয়োলোজোনে ও বাকি দু’জন রেডজোনে মারা গেছেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে আরো একজন হাসপাতালের রেডজোনে মৃত্যুবরণ করেছেন।
১৬ জুন শহরের রেলগেট এলাকার মনোয়রা বেগম করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জুন বিকালে রেডজোনে তার মৃত্যু হয়। ১৫ জুন উপশহর এলাকার পাপিয়া করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের ইয়োলোজোনে ভর্তি হন। ১৬ জুন তার করোনা শনাক্ত হলে রেডজোনে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়। ১৭ জুন সকালে চাঁচড়ার জাহাঙ্গীর হোসেন করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের ইয়োলোজোনে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এদিন সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘন্টায় রেডজোনে নতুন করে ২৬ জন ভর্তি হয়েছেন। ছাড়পত্র নিয়েছেন নয় জন। মোট চিকিৎসাধীন ৯১ জন। ইয়োলোজেনো ২৪ ঘন্টায় ভর্তি ৩২ জন। ছাড়পত্র নিয়েছেন ১৬ জন। মোট চিকিৎসাধীন ৪০ জন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আখতারুজ্জামান জানান, হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনা ডেডিকেটেড ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা কম থাকায় রোগীদের কষ্ট করে সেবা নিতে হচ্ছে। নতুন করে ৫০ বেডের প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরও জানান, করোনা চিকিৎসা সেবা পরিচালনার জন্য সাজেদা ফাউন্ডেশন থেকে ১০ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স, প্যারামেডিকেল ডিপ্লোমাধারী ১২ জন ব্রাদার, ১০ জন ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী আগামী দুই মাস কাজ করবেন। এছাড়া পাঁচটি হাইফ্লো নাজাল যন্ত্রসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, অক্সিজেন, ওষুধসহ বিভিন্ন সরঞ্জামও সরবরাহ করবে সংস্থাটি। বিপদকালীন সংকট কাটাতে প্রস্তুতি সম্পন্ন। তারপরও চাওয়া এখন একটিই স্বাভাবিক হোক করোনা পরিস্থিতি। আক্রান্তের উর্দ্ধমুখিতা নয়, স্বাস্থ্য সচেতনতায় নিয়ন্ত্রণে আসুক করোনা।
খুলনা গেজেট/ এস আই