যশোরে রোজার বাজারে যেন আগুন জ্বলছে। রমজান মাসের শুরুতেই তেঁতে উঠেছে ইফতার সামগ্রীর বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইফতারের সব সামগ্রীর দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। যা কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। হঠাৎ করেই এসব সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে বাজার সিন্ডিকেটকে দূষছেন ক্রেতারা।
যশোরের বড় বাজার ঘুরে দেখা যায় মানুষের ব্যাপক ভিড়। সবাই ব্যস্ত ছিল রমজানের ইফতার বাজারের কেনাকাটায়। কিন্তু এ কাজে কারো মুখে হাসি ছিল না। সবাইকে গোমরা মুখেই কেনাকাটা করতে দেখা যায়। এর নেপথ্যে কারণ হচ্ছে, অনিয়ন্ত্রিত বাজার দর। রমজানকে ইস্যু করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোন কারণ ছাড়াই ইফতার সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে গত সপ্তাহের চাইতে শনিবার নিত্যপণ্যের মূল্যে ব্যাপক ফারাক ছিল। পণ্যভেদে এসব মালামালের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ জনগন। অথচ এ নিয়ে তাদের অভিযোগ করার কোন জায়গা নেই। তারা জানতে পারছে না কী কারণে এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি।
রোববার বড় বাজারে দেখা গেছে, ইফতার সামগ্রী তৈরির অন্যতম উপাদান বেসন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৯৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৩ টাকা কেজিতে, গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ৫ টাকা কম ছিল। চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে, যা একইভাবে গত সপ্তাহে ৫ টাকা কম ছিল। খেসাড়ির ডাল ৭৫ টাকা, মুড়ি লুজ (বস্তায়) ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, মুড়ি প্যাকেট ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ৫ থেকে ১০ টাকা কম ছিল। এছাড়া, কলার বাজারে শনিবার থেকেই রীতিমত আগুন লেগেছে। এদিন প্রতি ডজন ভালোমানের অমৃত সাগর কলা বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা ডজন। যা গত দু’দিন আগে ছিল ৭০ টাকা। সাগরসহ অন্যান্য কলার দামও ডজন প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে, ইফতারের অন্যতম সামগ্রী খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৫শ’ টাকা কেজি দরে। যা কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। দাবাজ খেজুরের প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা, কুল খেজুর ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা, আজুয়া ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, জিহাদী ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, খুরমা ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, এদিন শশা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে ক্রেতা শহরের লোন অফিসপাড়ার রেজাউল ইসলাম বলেন, ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়ে যেতে পারে বলে রোজার শুরুর দিনেই কিনতে বাজারে এসেছি। কিন্তু এসেই বিপদে পড়েছি। সব জিনিষের মূল্যই কোন কারণ ছাড়াই বাগানো হয়েছে। গেল সপ্তাহে যে দামে জিনিষপত্র কিনেছি, সেই দাম আজ নেই। রমজানকে ইস্যু করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ এ বিষয়ে অভিযোগ করার কোন স্থান নেই। কষ্টের এ কথা বলবো কোথায়?
বড় বাজারের মুদী দোকানি ডালিম স্টোরের মালিক ডালিম হোসেন বলেন, এবারের রমজানের শুরুতে জিনিষপত্রের দাম বাড়েনি। কোন কোন ক্ষেত্রে দু’তিন টাকা বেড়েছে। অথচ অন্যান্যবার অনেক বেশি বেড়ে থাকে। এ নিয়ে ক্রেতাদের হতাশ হবার কোন কারণ নেই।
বিষয়টি নিয়ে খেজুর ব্যবসায়ী মাহবুবর রহমান বলেন, গত দু’দিন আগে আড়ৎ থেকে যে দামে খেজুর কিনেছি, আজ কিনতে গিয়ে দেখেছি তার দাম কেজি প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে আমাদের কোন উপায় নেই। আমরা যে দামে কিনি তার থেকে একটু বেশিতে খুচরা বিক্রি করে থাকি। মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে আমদানীকারক ও পাইকার ব্যবসায়ীরা।
খুলনা গেজেট/এএ