যশোরের ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে যুবলীগ নেতার হত্যার হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের অডিও ভাইরালের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমপি ও উপজেলা চেয়াম্যানের নাম ভাঙিয়ে হুমকি প্রদর্শন করায় কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন ওই দু’নেতা। স্কুলের কমিটি গঠন নিয়ে ওই অশ্লিল কথাবার্তা ফাঁস হয়ে পড়ার পর অভিযুক্ত সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহŸায়ক মাজহারুল ইসলাম গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তবে ৫ এপ্রিল বিকেলে তাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি ইউনিট আটক করেছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
গত ২৪ মার্চ দুপুরে যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে ফোন করে হত্যার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। মোবাইল ফোনে এই হুমকির ঘটনায় ৩১ মার্চ যশোর কোতোয়ালি থানায় জিডি (জিডি নম্বর ১৫৯১) করেন প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম। জিডিতে তিনি জীবনের নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন।
এরপর ৪ এপ্রিল হত্যার হুমকি ও কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই অডিওতে যে ফোনালাপ রয়েছে, তাতে শোনা যাচ্ছে যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে বলছেন আমার এমপি সাহেব (যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ) আমারে পাঠিয়েছে। এখন আমি আপনার স্কুলের চেয়ারের সামনে বসে আছি। ফরিদ ভাই (সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমে§দ চৌধুরী) কালকে আপনার বাসায় লোক পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বলেছি, আপনি অসুস্থ, তাই আসেনি। ফিঙে লিটনের (যশোরের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী) গাঁজাখোর, ইয়াবাখোর ছেলেপেলে গিয়ে আপনার সঙ্গে যদি খারাপ ব্যবহার করে, তাহলে পরবর্তীতে আমার ঘাড়েই আসে। আপনি কার ক্ষমতায় এ কমিটির আবেদন করছেন, সেটা আপনাকে বলতে হবে। আর যদি না করেন, তা হলেও বলে দিতে হবে, আমি এই কমিটির আবেদন করব না। তারপর আপনার সঙ্গে এই বিষয়ে বুঝব।
ফোনে মাজহারুল আরো বলেন, শোনেন স্যার, আমি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারব না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার সঙ্গে কথা বলবেন, না কী বলবেন, আপনি জানেন। আপনার কোন মা-বাপ (গণমাধ্যমে অপ্রকাশযোগ্য গালি) আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি যদি আবেদন না করেন, তা হলে আপনি যদি যশোর থাকতে পারেন, তারপরে আমি চুড়ি পরে এই যশোরে ঘুরে বেড়াব। আমি আপনার সঙ্গে দুই বছর ভালো ব্যবহার করেছি। তোমারে কিডা ঠেকাই আমি দেখবানে। তোর এত বড় সাহস তুই কাজী নাবিল আহমেদের ডিও লেটারে মামলা করেছিস। তোর কিডা আছে ? তুই আজকের পর থেকে নীলগঞ্জে কীভাবে থাকিস, দেখবানে। তোর লোকজন, পুলিশ-র্যাব নিয়ে থাকিস। আমি আসছি। প্রধান শিক্ষক এসময় বিনয়ের সাথে বলেন তুমি আমার ছাত্র ছিলে, এভাবে বলছ কেন ?
এসময় মাজহারুল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন এই শহরে এমন কোনো অফিসার নেই যে আমাকে দেখে নাবিল সাহেবের প্রতিনিধি মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ার এগিয়ে দেয় না। আর তোর কত বড় সাহস! তুই নাবিল আহমেদের ডিও লেটার ওপর এখনো কমিটি আবেদনের দরখাস্ত দিসনে। তোর যে আব্বাগুলো আছে, তাদের বলবি। মাজহারুল এই হুমকি দিয়েছে। তাদের আমারে কিছু করে নিতে বলিস।
এদিকে, ঘটনার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেছেন, মাজহারুল ইসলাম তার ছাত্র। সে যত বড় নেতাই হোক একজন শিক্ষকের সাথে ওই ধরণের নোংরা আচরণ করা কতটুকু সমীচীন। সে জানিয়েছে পাঁচটি হত্যা মামলার আসামি সে। আমাকে হত্যা করে আরেকটি হত্যা মামলার আসামি হতে চায়। এ জন্য আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে কথা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের উপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, জিডির ব্যাপারে যোগায়োগ করা হলে ১ এপ্রিল যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহŸায়ক মাজহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের কাছে আমিও পড়েছি। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তাঁর সাথে আমার পটেনা। ছয় মাস আগে এমপি কাজী নাবিল আহমেদ স্থানীয় মনিরুজ্জামানকে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি করার জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই প্রধান শিক্ষক কমিটি চেয়ে শিক্ষাবোর্ডে চিঠিই পাঠাননি। যে কারণে ইছালী ইউনিয়নে এমপি নাবিল আহমেদের প্রতিনিধি হিসেবে ওই প্রধান শিক্ষকের সাথে আমি কথা বলেছি, এটা সত্য। তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অডিওর কিছু কথা সুপার এডিট করা হয়েছে।
এদিকে, ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিভিন্ন মহল থেকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশ অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মাজাহারুল ইসলামকে আটক করেছে। তাকে এলাকায় বা কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা। বা তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শহরের একটি স্পট থেকে তুলে নিয়ে গেছে। তাকে গোপন স্থানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তার এক ভাইপো জানিয়েছেন তিনি আটক হননি, পলাতক রয়েছেন।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুপন কুমার সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আটকের তথ্য সঠিক নয়। তবে ওই জিডির ঘটনা ডিবি পুলিশ খতিয়ে দেখছে। অডিওটিও তিনি শুনেছেন। ওই প্রধান শিক্ষকের জিডি তদন্তের অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদনও করা হয়েছে।
এদিকে, যুবলীগ দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ওডিওটি ভাইরাল হয়েছে। দলের ভারমূর্তি নষ্ট করেছে মাজহারুল ইসলাম। তিনি এমপি কাজী নাবিল আহমেদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকেও খাটো করেছেন। যে কারণে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।
খুলনা গেজেট/ টি আই