পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এ বছর যশোরের বাজারে ইলিশের উত্তাপ দেখা যায়নি। টানা দু’বছর করোনার পর এবারও ক্রেতা সঙ্কটে ভুগছেন ইলিশ বিক্রেতারা। তারা জানান, প্রতি বছর স্বাভাবিক অবস্থায় পহেলা বৈশাখের যে আয়োজন চলে, এবার তা নেই। ঘরে ঘরে কিংবা সংগঠনের উদ্যোগে পান্তা-ইলিশের আয়োজনও রমজানের কারণে হচ্ছে না। মূলত রমজানের কারণেই এমন নিরুত্তাপ ইলিশের বাজার বলে মনে করেন তারা।
বুধবার শহরের বড় বাজারের মাছ চান্নি ঘুরে দেখা যায়, মাত্র নয়জন বিক্রেতা ইলিশ মাছ বিক্রি করেছেন। মৌসুম না থাকায় সরবরাহও অনেক কম। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অন্যান্য বছর চাহিদা বেশি থাকায় সরবরাহও বেশি থাকতো। কিন্তু এ বছর রমজান মাসের মধ্যে বৈশাখ উদযাপনে মানুষের ইলিশ নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ নেই। ফলে দাম না বাড়লে ও জমেনি ইলিশের বাজার।
এদিন ছোট সাইজের ইলিশের প্রতি কেজি চার থেকে সাড়ে ছয়শ টাকা, পাঁচশ’ থেকে সাতশ’ গ্রাম সাইজের ইলিশ সাত থেকে আটশ’ এবং কেজির উপরের ইলিশ আঠারশ’ থেকে দু’হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যদিও যশোরের বাজারে বড় ইলিশের তেমন একটা দেখা মেলেনি।
বড় বাজারের মাছ চান্নিতে ৪০ বছর ধরে ইলিশ বিক্রি করেন স্বপন হাওলাদার। তিনি বলেন, করোনার আগে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছেন। কিন্তু এবার দিনে বিক্রি করেছেন মাত্র ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার মাছ। এবারের বৈশাখে যশোরে ইলিশের দাম কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এবার রমজানসহ নানা কারণে ইলিশের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম রয়েছে।
ইলিশ বিক্রেতা শঙ্কর ও এরশাদ আলী বলেন, মৌসুম না হওয়া এবং নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম। সাধারণত শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়। এরপরও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তারা অনেক ইলিশ জোগাড় করেন। কিন্তু এবার রমজানের কারণে সরবরাহ কম। ক্রেতা নেই বললেই চলে। বৈশাখ উপলক্ষে করোনার আগে বর্তমান সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ইলিশ বিক্রি করেছেন বলে জানান তারা।
খাইরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, এবার রোজা থাকায় বৈশাখে ইলিশ কেনার ইচ্ছে নেই। কিন্তু শিশুদের আবদার আছে, এ কারণে বাধ্য হয়ে ইলিশ কিনতে আসেন তিনি। দাম তেমন বেশি না হলেও বাজারে ভালো ইলিশ নেই বলে জানান খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা ইলিশের ব্যবসায় নেমে পড়েন। বাজারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্রিজের ইলিশ বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকান বিক্রেতারা। তবে, এবার রমজানের কারণে ইলিশের প্রতি মানুষের চাহিদাও অনেক কম বলে তিনি মনে করেন।