যশোরে মামলা প্রত্যাহারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনজীবীকে হুমকির অভিযোগ উঠেছে এক ব্যারিস্টারের বিরুদ্ধে। তিনি ওই মামলা তুলে নিতে সন্ত্রাসীদের এনে হুমকি ধামকি দিয়েছেন। এমনকি আদালত চত্বরে অস্ত্র নিয়েও মহড়া দেন বলে অভিযোগ করা হয়। এমতাবস্তায় আদালতের আইনজীবী, শিক্ষানবীশ আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীরা একত্রিত হয়ে ওই সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেন। এ সময় সন্ত্রাসী একজনকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। এ নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে তোপের মুখে পড়েন ওই ব্যারেস্টার। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় যশোর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে। অভিযুক্ত ব্যারিস্টার একে এম মুর্তজা রাসেল চৌগাছা উপজেলার মাকাপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে।
ভুক্তভোগী সিনিয়র আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, রাসেলের বিরুদ্ধে তার আপন ভাই মামলা করেন। এছাড়া তার মারও একটি মামলা রয়েছে আদালতে। যার আইনজীবী তিনি নিজে। মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ রাসেল নিজে ও সাথে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী নিয়ে তার কাছে যান এবং বলেন ওই সব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এমনকি নিজে ইচ্ছেমত উকালতনামা লিখে এনে সেখানে স্বাক্ষর করে দিতে ভয়ভীতি দেখান। স্বাক্ষর না করায় তাকে লাঞ্চিত করা হয়। বিষয়টি আদালতে থাকা আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের নজরে আসে। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এতে রাসেল ও তার সাথে সন্ত্রাসীরা রুখে উঠে। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা একাট্টা হয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেন।
যদিও এসব বিষয় অস্বীকার করেন ব্যারিস্টার একেএম মুর্তজা রাসেল। তিনি বলেন, ফরিদুল ইসলামকে মামলা তুলে নিতে বললে তিনি অপরাগত প্রকাশ করেন। পরে বিভিন্ন লোকজন এনে তার ও তার স্বজনদের উপর হামলা চালান বলে পাল্টা অভিযোগ করেন। ফরিদুলের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে জানান।পরবর্তীতে জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র আইনজীবীরা কোতোয়ালি থানায় যান। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান দুই পক্ষের অভিযোগ শোনেন। পরে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্ত্তজা ছোট ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীন থানায় গিয়ে ঘটনা শুনে মীমাংার আশ্বাস দিয়ে আসেন থানা কর্তৃপক্ষেকে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা বলেন, বিষয়টি দুঃজনক ও অনাকাঙ্খিত। সোমবার দুপুরে ও বিকেলে সমিতির কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। এ সময় কাজী ফরিদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মর্তুজার বক্তব্য শুনে তিনি উভয়ের ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে সমঝোতা করে দেন। এতে উভয়পক্ষ সন্তষ্ট হয়েছেন বলে তিনি জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন, শাহানুর আলম শাহীন, বাসুদেব বিশ্বাস, স্বপন ভদ্র, মাহমুদুল হাসান বুলু, জুলফিকার আলী জুলু, মোস্তফা হুমায়ুন কবির, রুহিন বালুজ, তাহমীদ আকাশ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রথমে মা ও ভাই মামলা দায়েরের পর ব্যারিস্টার একেএম মুর্তজা রাসেল তার মা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজনসহ ১০ জনকে আসামি করে পাল্টা চৌগাছা থানায় মামলা করেন। এ মামলার অভিযোগে বড় বোন ও ছোট ভাইকে আটক করে পুলিশ। অন্যদিকে, মোর্তজা বাদে অন্য ৫ ভাইবোন ও মা অভিযোগ করেন মুর্তজা তার বাবাকে হেফাজতে নিয়ে জমি লিখে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এরই মাঝে সোমবার ভাই ও বোন জামিনে মুক্তি পান। এরপরই আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
খুলনা গেজেট/কেডি