খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  রিসেট বাটন বলতে ৭১ এর গর্বিত ইতিহাস নয় দূর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতি মুছে নতুন সূচনার কথা বলেছেন ড. ইউনূস : প্রেস উইং
  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত
২৪ নং পিয়ারের পাইল ক্যাপ ঢালাই বুধবার

ভৈরব সেতুর কাজে গতি আসতে শুরু করেছে

একরামুল হেসেন লিপু

ঝিমিয়ে পড়া খুলনাবাসীর বহু কাঙ্ক্ষিত এবং প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজে কিছুটা গতি আসতে শুরু করেছে। সেতুর দিঘলিয়া অংশে দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব সংলগ্ন সরকারি খাস জমিতে ইতিপূর্বে টেস্ট পাইলিং শুরু হওয়া ২৪ নং পিয়ারের ১০টি পাইল ক্যাপ ঢালাই এর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ)।

সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার এস এম নাজমুল খুলনা গেজেটকে বলেন, আগামীকাল বুধবার (৩০ মার্চ) সকালে ২৪ নং পিয়ারের ১০ টি পাইল ক্যাপের উপর  একটি পাইল ক্যাপ কাষ্টিংয়ের সকল প্রস্তুতি আমরা ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি। আগামী ঈদুল ফিতরের পূর্বে ২৫ নং পিয়ারের ১০ টি পাইল ক্যাপ এবং নদীর পশ্চিম পার্শ্বে ১৩ নং পিয়ারের ১০ টি পাইল ক্যাপের উপর  একটি পাইল ক্যাপ কাষ্টিংয়ের কাজ আমরা সম্পন্ন করব ইনশাআল্লাহ। এ লক্ষ্যে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছি।

তিনি আরো বলেন, সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করার সকল প্রস্তুতি এবং ইকুপমেন্ট প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে আমরা কাজে গতি আনতে পারছি না।

ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি বলতে সেতুর দিঘলিয়া অংশে ২৪ এবং ২৫ নং পিয়ার এর ১০ টি করে ২০টি টেস্ট পাইলিং এবং টেস্ট পাইল পরবর্তী লোড টেস্ট এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল ৩০ মার্চ ২৪ নং পিয়ারের ১০ টি পাইল ক্যাপের উপর  একটি পাইল ক্যাপ কাষ্টিংয়ের কাজ হবে। আর সেতুর পশ্চিম পার্শ্বে ভৈরব নদীর তীরে ১৩ নং পিয়ারের ১০ টি টেস্ট পাইলিং এবং লোড টেস্ট এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে । একই স্থানে নদীর তীরবর্তী ১৪ নং পিয়ারের শীট পাইলিং ড্রাইভের কাজ এবং কেজিং এর সম্পন্ন হয়েছে ।

২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজ এর খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

ভৈরব সেতুর জন্য দিঘলিয়া, মহেশ্বরপাশা এবং দেবনগর মৌজার মোট ১৭ দশমিক ৪৯ একর (৭ দশমিক ০৮ হেক্টর) ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। এরমধ্যে সেতুর খুলনা শহরাংশ অর্থাৎ নগরীর কুলি বাগান থেকে রেলিগেট পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭ দশমিক ১১৩৬ একর (২ দশমিক ৮৮ হেক্টর) ভূমি রয়েছে। সেতুর উভয় পাশের উক্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর কার্যালয় থেকে গত বছরের নভেম্বর মাসে ভূমি অধিগ্রহণের এর কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য ২টি সংশোধিত প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করে। চলতি মাসের ৬ মার্চ খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ভূমি অধিগ্রহণের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে ভূমি মালিকদের ধারা ৪ এর (১)উপ ধারা মোতাবেক আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ প্রদান করা হয়। এদিন সেতুর দিঘলিয়া অংশ নগর ঘাট ফেরি ঘাট থেকে উপজেলা-সদর সংলগ্ন কুকুর মারা পর্যন্ত প্রায় ৪’শ জমির মালিকদের নোটিশ প্রদান করা হয়। বর্তমানে যৌথ ফিল্ডবুক এর এর কাজ চলমান রয়েছে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব সেতুর পিয়ার বসবে মোট ৩০ টি। এরমধ্যে নদীর পশ্চিম পার্শ্বে অর্থাৎ নগরীর কুলিবাগান থেকে রেলিগেট ফেরিঘাট সংলগ্ন নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিয়ার বসবে। এই অংশের প্রথম পিয়ারটি বসবে নগরীর কুলিবাগান আকাঙ্খা পাট গোডাউনের কর্ণারে। ৫ এবং ৬ নং পিয়ারের মাঝখান দিয়ে রেললাইন ক্রস করবে। এরপর ৭ এবং ৮ নং পিয়ার বসবে। ৯ থেকে ১৩ নং এই ৫ টি পিয়ার বসবে নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লিঃ এর অভ্যন্তরে। এর ফলে রপ্তানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গা পড়বে। ১৭ থেকে ২৮ নং পিয়ার বসবে ভৈরব নদীর পূর্বপাশ অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার নগরঘাট বানিয়াঘাট ফেরী সংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থান থেকে উপজেলা সদরের কুকুরমারা পর্যন্ত।

পশ্চিম পাশে নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং পিয়ার এবং পূর্ব পাশে নদীর পাড় থেকে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিয়ার বসবে। এছাড়া সেতুর উভয় দিকে সেখান থেকে সেতুর স্লোপ শুরু হবে সেখানে A-1 এবং A-2 দুটি এবাটমেন্ট বসবে। নদীর ভেতর কোন পিলার বসবে না। ১৫ এবং ১৬ নং পিলারের উপর ১০০ মিটার স্টিলের সিটে বসবে। নেভিগেশনের জন্য যাতে সেতুর নীচ দিয়ে অনায়াসে কার্গো এবং জাহাজ চলাচল করতে পারে সেজন্য মূল ব্রিজের স্নাব বটম জোয়ারের পানি থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে।

ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!