প্রিয় সংস্করণে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলবে, এটাই স্বাভাবিক। ওয়ানডে ক্রিকেটটা খুব উন্মাদনা নিয়ে খেলেও বাংলাদেশ। দেশ-বিদেশে ম্যাচ এবং সিরিজও জিতেছে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে। সেদিক থেকে দেখলে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে আশাবাদী থাকার কথা বাংলাদেশের। অথচ এবার স্বাগতিক দলে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। কারণ গত সাত মাসে ওয়ানডে পারফরম্যান্স তেমন ভালো ছিল না। নাজমুল হোসেন শান্তরা সর্বশেষ ২২ ওয়ানডে খেলে ১৫টিতে হেরেছে, জিতেছে ছয়টিতে। তাই লঙ্কানদের বিপক্ষে এক দিনের সিরিজকে দেখা হচ্ছে হৃত আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার অভিযান হিসেবে।
যে অভিযান আজ শুরু হচ্ছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। যেখানে সদ্য সমাপ্ত টি২০ ম্যাচে ত্রাস ছড়ানো নুয়ান তুশারা থাকছেন না। টি২০ স্পেশালিস্ট এই পেসারকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে লঙ্কান ম্যানেজমেন্ট। আর ইনজুরির কারণে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পারছেন না আরেক লঙ্কান পেসার মাতিশা পাথিরানাও।
এক দিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বিবর্ণ হতে শুরু করে গত বছর আগস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে। তামিম ইকবালের অবসর এবং টাইগারদের সিরিজ হার এক সুতায় বাঁধা। বাংলাদেশ সেই যে ব্যাকফুটে গেছে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এশিয়া কাপ, নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্বকাপে টাইগারদের চরম ভরাডুবি দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। যদিও বিশ্বকাপ-পরবর্তী সময়ে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে। প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারান শান্তরা। এই সিরিজ দিয়েই সৌম্য সরকার হৃত আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছেন। অতএব লঙ্কানদের বিপক্ষে হোম সিরিজে ভালো পারফরম্যান্স আশা করতেই পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। গতকাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে টাইগার দলপতি শান্ত বলেন, ‘সব সময় তো চ্যালেঞ্জ থাকবেই। আন্তর্জাতিক যে কোনো দলের বিপক্ষে এটা থাকবে। আমরা ২০১৫ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ভালো ক্রিকেট খেলছি। একটা বছর খারাপ যেতেই পারে। কীভাবে দল হিসেবে ভালোভাবে ফিরতে পারি, বছরটা ভালোমতো শুরু করতে পারি, এটা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমরা ভালোমতো প্রস্তুত।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ শেষ ওয়ানডে খেলে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। ঘটনাবহুল সে ম্যাচটি সাকিব আল হাসানরা জিতেছিলেন। ঐতিহাসিক টাইমড আউটের ঘটনা সে ম্যাচে ঘটেছে সাকিব কর্তৃক। এবার হোম সিরিজে সাকিব না থাকলেও টাইমড আউটের রেশ রয়ে গেছে। সিলেটে টি২০ সিরিজ জিতে যেমন টাইমড আউট উদযাপন করেছেন লঙ্কানরা। আজ প্রতিশোধের ওয়ানডে ম্যাচেও থাকতে পারে সে রেশ। তবে স্বাগতিকরা জিতে গেলে উদযাপনে ভিন্নমাত্রা পাবে। গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজে তেমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাবে না বাংলাদেশ। শান্তর কথায়ও তা পরিষ্কার, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা দল হিসেবে খেলছি কিনা। নিউজিল্যান্ড সিরিজে আমার মনে হয়েছে, দল হিসেবে খেলতে চেয়েছি, প্রতিটি ম্যাচ যে কোনো পরিস্থিতিতে জিততে চেয়েছি। পরবর্তী বিশ্বকাপ আসা পর্যন্ত এটাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। দল হিসেবে আমরা কত ভালো ক্রিকেট খেলছি এবং একজন আরেকজনকে কত সাপোর্ট করছি সেটা আসল বিষয়। পরবর্তী সাড়ে তিন-চার বছরে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা কতটা একসঙ্গে আছি।’
এশিয়া কাপ থেকে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টেও ব্যাটিং অর্ডার ঠিক ছিল না। মাঠের পারফরম্যান্সে যেটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এসেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সৌম্য সরকার ফেরায় ওপেনিংয়ে ভারসাম্য ফিরেছে। কিউইদের বিপক্ষে এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে সৌম্য জুটি করেন। ভালোও খেলেছেন দু’জন। চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গে পুরোনো জুটিকে খেলাতে পারেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিন নম্বরে শান্ত, চারে লিটন, পাঁচে মুশফিকুর রহিম, ছয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থাকলে সে ক্ষেত্রে সাত নম্বরে মেহেদী হাসান মিরাজকে দেখা যেতে পারে। বাকি চারজন বোলার। তিন পেসারের সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম খেলতে পারেন। কম্বিনেশনের কারণে ব্যাটিং অর্ডার একটু এদিক-ওদিক করতেই পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। এই কৌশল ইতিবাচক ফল দিলে পরিবর্তনও ভালো। শ্রীলঙ্কা টি২০ এবং টেস্টে যত ভালো, এক দিনের ক্রিকেটে ততটা নয়। স্বাগতিকদের আশাবাদী হওয়ার এটাও একটা কারণ।