সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে রোড মার্চ, লং মার্চ কর্মসূচি শেষে ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে চাচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি ও কৌশল নিয়ে সমমনাদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সবার মতামত পর্যালোচনা করে নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। নতুন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারও রাজপথে নামবে দলটি। আন্দোলনে দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী ছাড়াও অন্যান্য জোট, দল ও সংগঠনকে যুগপৎভাবে রাজপথে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা চলছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে শিগগির চূড়ান্ত হলে তা ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এবার আর সরকারকে কারচুপির ভোট করে ক্ষমতায় যেতে দেবে না জনগণ। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, সরকার পতনের আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে চলতি সপ্তাহে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। আগামী সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। একই সঙ্গে আন্দোলনের অভিন্ন রূপরেখাও বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। এতে বিএনপির মূল দাবিকে অক্ষুণ্ণ রেখে অন্য দলগুলোর দাবি-দাওয়া অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাতে উল্লেখ থাকবে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে দলগুলো কী করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে রূপরেখা ও যুগপৎ কর্মসূচি একই সঙ্গে ঘোষণা করা হতে পারে। কর্মসূচির মধ্যে রোড মার্চকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচিতে বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়াও বৃহৎ জেলাগুলোতে সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েও পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে চলমান এসএসসি পরীক্ষার বিষয়টিকেও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। পরীক্ষা চলাকালে বড় কর্মসূচি কীভাবে এড়ানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে দলের মধ্যে।
বিএনপির নেতারা জানান, ঢাকা অভিমুখে চূড়ান্ত কর্মসূচির আগে বিভাগীয় শহরে রোড মার্চ, লংমার্চ, ক্রস রোড মার্চ কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহরে রোড মার্চের চিন্তাভাবনা করছেন দলটির হাইকমান্ড। একই সঙ্গে প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকায়ও সমাবেশ করবে তারা। সর্বশেষ ঈদুল আজহার পর ঢাকামুখী চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। তার আগে জনসম্পৃক্ততামূলক একাধিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। ঢাকামুখী কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ঘেরাও, গণভবন ও বঙ্গভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি। একই সঙ্গে সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচিও দিতে পারে বিরোধী দলটি। নতুন এসব কর্মসূচির পথ ধরে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যেতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
দলের শীর্ষ নেতারা জানান, এবারের আন্দোলনকে তাঁরা দীর্ঘায়িত করতে চান না। এজন্য ঈদুল আজহার আগে আন্দোলনের গতি ও জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে মাঠ প্রস্তুত করতে চান। ঈদের ছুটির মধ্যে যাতে সেটা অব্যাহত থাকে তার পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন দলের হাইকমান্ড। এর পরপরই এক দফার আন্দোলনের জন্য ঢাকাকে বেছে নেওয়া হবে। ভিন্ন দিকে ক্ষমতাসীন দলের কার্যক্রম, পরিকল্পনা নিয়েও সচেষ্ট থাকবেন তাঁরা। মামলা-হামলা, গ্রেপ্তারসহ যে কোনো নির্যাতন থেকে তাঁদের নিবৃত রাখতে, দাবি মানার জন্য চাপ তৈরি করতে পেশাজীবী, সুশীল সমাজকে কাজে লাগানোর চেষ্টা থাকবে। অন্যদিকে, কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত রাখা হবে বলে নেতারা জানান।
বিরোধীদলীয় সূত্র জানায়, যে কোনো সময়ের চেয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যথেষ্ট শক্তিশালী। এখন এই সংগঠনের ওপর ভিত্তি করেই আন্দোলনে যাওয়া যেতে পারে। তবে মহানগর বিএনপির সক্ষমতা নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে চাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। শুধু তাই নয়, ঢাকায় আন্দোলনের সফলতার লক্ষ্যে মহানগরকেন্দ্রিক অঙ্গসংগঠনগুলোকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে এসব সংগঠনের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। আন্দোলন-সংগ্রামে মহানগর বিএনপির নির্দেশনায় অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সংগঠনগুলোতে দীর্ঘদিনের বিদ্যমান সিন্ডিকেট কিংবা ‘ভাই’ গ্রুপগুলোকে ইতোমধ্যে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, যাতে একক নির্দেশনায় সব নেতাকর্মী একযোগে মাঠে নামতে পারে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটগুলো যুগপৎ আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা দেবে, সেটা সফল করতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি প্রস্তুত এবং সফলও হবো।
মহানগর নেতারা জানান, গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া রাজপথের আন্দোলনে তাঁদের ‘ওয়ার্মআপ’ পর্ব প্রায় শেষ হয়েছে। এখন তাঁদের চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে হবে। এর মধ্যেও যেসব নেতাকর্মী কম সক্রিয়, কর্মসূচিতে গড়হাজির থাকছেন, তাঁদের তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিষ্ক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে অধিকতর সক্রিয়দের পদায়ন করতে হবে। দুই মহানগরের সাংগঠনিক নির্দেশনামূলক চিঠিতে বলা হয়েছে, সব থানা কমিটির আহ্বায়ক আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিটি থানার নিষ্ক্রিয় ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন, ওয়ার্ড কমিটির নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরি করে সক্রিয় নেতাদের দ্বারা পদ পূরণ করবেন। এ কাজ বাস্তবায়নে সাংগঠনিক জোনাল টিম এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ নিতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, সরকারকে হটাতে যে কোনো আন্দোলন সফল করতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। তাঁদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান। সব বিভেদ ও মান-অভিমান ভুলে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।
ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হলো রাজধানী। তাই ঢাকাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনের জন্য ঢাকা মহানগরকে একেবারে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করার পরিকল্পনায় কাজ শেষ পর্যায়ে।
খুলনা গেজেট/এইচ