সাতক্ষীরায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি পরও থামছে না অপরিপক্ক আম ক্যামিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করা। জেলা প্রশাসন ঘোষিত আমপঞ্জি মানছে না কেউ। এক শ্রেণির অসাধু আম ব্যবসায়ি অধিক মুনাফা লাভের আশায় অপরিপক্ক আম ক্যামিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠাচ্ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দেবহাটার গাজীরহাট এলাকা থেকে দশ টন অপরিপক্ক ও ক্যামিক্যাল মিশ্রিত আম জব্দ করে স্থানীয় প্রশাসন।
এনিয়ে গত ১০দিনে জেলার সদর, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২৩ টন ক্যামিক্যাল দিয়ে পাকানো অপরিপক্ক আম জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়েছে। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অলিউর রহমান নামের কালিগঞ্জের একজন আম ব্যবসায়িকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) ভোররাতে উপজেলার গাজীরহাট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আম ভর্তি তিনটি ছোট মিনি ট্রাক আটক করেন। পরে ওই তিনটি ট্রাক থেকে দশ টন অপরিপক্ক ও ক্যামিক্যাল মিশ্রিত আম জব্দ করা হয়। প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অতি মুনাফা লাভের আশায় অপরিপক্ক এসব আম ক্যামিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল ব্যবসায়ীরা। পরে দুপুরে জব্দকৃত ক্যামিক্যালযুক্ত এসব আম দেবহাটা ফুটবল মাঠে জনসম্মুখে বিনষ্ট করে হয়।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ি এই আম ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলো বলে জানা গেছে। যেসব আম জব্দ করা হয়েছে তার ভিতরের আঁঠি এখনো পুষ্ট হয়নি। তাছাড়া জব্দকৃত আম জনসম্মুখে গাড়ির চাকায় পিষে এবং কেটে নষ্ট করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাতক্ষীরার আমের সুনাম নষ্ট না হয় সেজন্য এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে গত ৯ এপ্রিল রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় অভিযান চালিয়ে ঢাকায় প্রেরণকালে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো ১ হাজার ৫শ’ কেজি আম জব্দ করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আজাহার আলী। এসময় ক্ষতিকর আম বহনকারী পিকআপটিও জব্দ করা হয়।
গত ১৫ এপ্রিল শনিবার রাতে কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে পিকআপ ভর্তি রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত ২৫শ’ কেজি অপরিপক্ব গোবিন্দভোগ আম জব্দ করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আজাহার আলী অপরিপক্ব এসব আম পিকআপের চাকায় পিষে বিনষ্ট করে ফেলেন। কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের শহীদ সোহওয়ার্দী পার্কে জনসম্মুখে এই আম ধ্বংস করা হয়।
গত ১৬ এপ্রিল রোববার রাত ১১ টা থেকে সোমবার (১৭ এপ্রিল) ভোর রাত ২ টা পর্যন্ত টানা তিন ঘন্টা সাতক্ষীরা শহরের বাকাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো বিভিন্ন প্রজাতির ৮ হাজার কেজি আম জব্দ করে র্যাব-৬ সাতক্ষীরা ক্যাম্পের সদস্যরা এই আম জব্দ করার পর তা বিনষ্ট করা হয়। রাসায়নিক দ্রব্য (কার্বাইড) মেশানো এ সকল আম ঢাকায় পাঠানো হচ্ছিল।
অপরদিকে কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগরে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে অপরিপক্ক আম পাকানোর অপরাধে অলিউর রহমান (৩৮) নামে এক আম ব্যবসায়িকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ১৭ এপ্রিল সোমবার দুপুর ২ টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আজাহার আলী এই সাজা প্রদান করেন। সাজাপ্রাপ্ত আম ব্যবসায়ী অলিউর রহমান সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের মোঃ নজরুল ইসলাম গাজীর ছেলে। এর আগে কৃষ্ণনগর বাজারে অভিযান পরিচালনা করে রওশান আলী কাগুচির দোকান ঘর থেকে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে পাকানো ২৬ ক্যারেট প্রায় এক হাজার কেজি গোবিন্দভোগ আম জব্দ করা হয়।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আজাহার আলী বলেন, বিভিন্ন প্রকার আম বাজারজাতকরণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ সময়সূচী নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে অসাধু ব্যবসায়িরা বেশি মুনাফা লাভের আশায় রাসায়নিক আম পাকিয়ে তা বিক্রি শুরু করেছেন ও ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে পাঠাচ্ছেন। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা আম বাইরে থেকে পাকা মনে হলেও আসলে সেগুলো অপরিপক্ক। এই আম মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ি অসাধু আম ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরায় নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা রোববার (১৬ এপ্রিল) বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুস্বাদু গোবিন্দভোগ আম বাজারে উঠবে আগামী ১২ মে। এসময় গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ স্থানীয় জাত সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া ২৫ মে হিসাগর ও ক্ষীরশাপাতি, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন আম্রপালি আম গাছ থেকে নামাতে ও বাজারজাত করতে পারবেন বাগান মালিকরা।
সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, নির্ধারিত দিনের পূর্বে আম বাজারজাত করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা কার্বাইড বা ক্যামিক্যাল দিয়ে অপরিপক্ক আম পাকাবে তাদেরকে আটক করে জেলে পাঠানো হবে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের এই নির্দেশনা থাকা সত্বেও থামছে না অপরিপক্ক আম ক্যামিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করা। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও ক্যামিক্যালে পাকানো অপরিপক্ক আম জব্দ করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম