যশোরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আগামীতে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একটিই পরীক্ষা হবে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সমাবর্তনে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন পাঠ্যক্রমের ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে। বইতে যা নেই তাই উপস্থাপন করা হচ্ছে। এডিট করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। নতুন বইগুলো পরীক্ষামূলক সংস্করণ করা হচ্ছে। এটা সংশোধন হচ্ছে ও হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষাকে উপযুক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করতে হলে গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ফসলকে জনগণের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রয়োজন হয় উদ্যোক্তা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলো বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে। এটা সত্যিই খুশির খবর।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর প্রথমে তিনি যবিপ্রবির প্রধান ফটকের পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে সমাবর্তনের শোভাযাত্রা সহকারে তাঁরা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। এবারের সমাবর্তনে যবিপ্রবির স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে এক হাজার ৮৩৪ জন গ্রাজুয়েট অংশগ্রহণ করে। এদেরমধ্যে ২২ জন গ্রাজুয়েট চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, ২৬ জন ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড এবং ৫৬ জন ডিন্স অ্যাওয়ার্ড পান।
ডা. দীপু মনি বলেন, উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করেছি, তারা কাজও শুরু করেছে। শিক্ষা ও গবেষণা খাতকে প্রাধান্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার নতুন নতুন প্রণোদনা দিচ্ছে। শিক্ষাকে সহজলভ্য করার জন্য সকল জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের যে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তারা যেন তাদের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি না করে। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তিতে নানা সমস্যা তৈরি ও অসন্তোষ হয়।
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যাত্রাপথকে অসততা দিয়ে কলুষিত করবেন না। এটি খেয়াল রাখতে হবে। সত্যের পথ একটু কঠিনই হয়। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম সে কখনো করে না বঞ্চনা।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর সম্পাদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বয়সে নবীন হলেও শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তারুণ্যদীপ্ত শিক্ষকমন্ডলী গবেষণা ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে।
স্বাগত বক্তব্যে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, তোমাদের এ অর্জনে তোমাদের পিতা-মাতা, শিক্ষকমন্ডলীসহ সমগ্র জাতি গর্বিত। সীমাহীন পরিশ্রম ও কর্তব্য নিষ্ঠা তোমাদের এ সাফল্য এনে দিয়েছে। দেশ-বিদেশে তোমরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করবে। তোমাদের কাজের উপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদা নির্ভর করবে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খাঁন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিহির রঞ্জন হালদার, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কামরুজ্জামান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু নঈম শেখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল, যবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের অধ্যাপক ড. গোলাম শাহী আলম, অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর, অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসিম রেজা ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আহসান হাবীব।