২০০৪ সালের ২১ জানুয়ারি। পাইকগাছা উপজেলার কাটিপাড়া বাজারে চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি করছিল পুলিশ। এরমধ্যে তিনজন একটি মটোরসাইকেলে ওই বাজারে পৌছায়। মোটরসাইকেল আরোহীর দেহ তল্লাশী করতে যায়। তাদের মধ্যে একজন কোমর থেকে পিস্তল বের করে পুলিশের গলায় ঠেকিয়ে ধরে। এসময় গ্রাম্য চৌকিদার আব্দুল জলিল এগিয়ে যাওয়া মাত্র সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিটি গ্রাম্য চৌকিদারের মাথা ভেদ করে বের হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০০৪ সালে পাইকগাছা থানার পুলিশ জানতে পারে ওই দিন অস্ত্রের একটি চালান কাটিপাড়া বাজার এলাকা দিয়ে যাবে। এটা জানতে পেরে পুলিশ বাজারে চেকপোস্ট বসায়। সকলের দেহ তল্লাশি করতে থাকে পুলিশ। এরই মধ্যে পাইগাছার চিহ্নিত তিন সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলযোগে দুপুর ২ টার দিকে কাটিপাড়া বাজারে পৌছায়। বাজারে পৌছানো মাত্র পুলিশ তাদের গতি রোধ করে। এসময় পুলিশ সদস্য দীপংকর তাদের কাছে পৌছানো মাত্র সন্ত্রাসী শহিদুল কোমর থেকে পিস্তল বের করে পুলিশের গলায় ঠেকিয়ে ধরে। শুরু হয় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি। এটা দেখে গ্রাম্য চৌকিদার জলিল তাদের নিকটে গেলে শহিদুল তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিটি জলিলের মাথা ভেদকরে বের হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। পরপরই পুলিশের অন্য সদস্য জামাল এগিয়ে গেলে তার কাছ থেকে রাশেদ গোলদার রাইফেল কেড়ে নেয় এবং মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তবে পুলিশের হাতে আটক হয় ঘাতক শহিদুল গোলদার।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- শহিদুল গোলদার, রাশেদ গোলদার ও আনোয়ার।
ঘটনার কয়েকদিন পর পুলিশের খোয়া যাওয়া রাইফেল ও সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় তিন দফায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রীর নারাজি আবেদনের কারণে দ্বিতীয় দফায় আরও তিনজনের নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয় চার্জশিটে। তারা হলেন- ওই এলাকার মজিদ গোলদার, আজিজ গোলদার ও ফজলুর রহমান মোড়ল।
এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আহাদুজ্জামান জানান, এ মামলার আসামি রাশেদ গোলদার বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। মামলার অপর তিন আসামি মজিদ গোলদার, আজিজ গোলদার ও ফজলুর রহমান মোড়লের নাম উচ্চ আদালতে নির্দেশে বাদ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টম্বর) খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আব্দুল জলিল হত্যা মামলার রায়। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে সকল দোষ প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে। আদালত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিবেন বলে তিনি আশাবাদি।