নড়াইলের বিভিন্ন বিল ও জলাশয় থেকে প্রযুক্তির ফাঁদে ফেলে অতিথি পাখি শিকার করছে শিকারিরা। জেলার বিভিন্ন স্থানে হরহামেশায় দেখা মিলছে আধুনিক প্রযুক্তির ডিজিটাল ফাঁদের। পরিবেশবিদরা বলেছেন এটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
জানা যায়, প্রতি বছরের মতো শীতের শুরুতে শীতপ্রধান দেশ থেকে এবারও দল বেঁধে অতিথি পাখিরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলের বিভিন্ন বিল ও জলাশয়ে আসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে চাঁচুড়ী বিল, ইছামতি বিল, কাড়ার বিল, নলামারা বিল, তালবাড়িয়া বিল, পাচুড়িয়া বিল, গোপালপুর-বগুড়ার বিল হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে।
জলাশয়ে দেশি-বিদেশি পাখির মধ্যে রয়েছে- বালি হাঁস, কালকোচ, কায়েম, ডুঙ্কর, পানকৌড়ি, পাতাড়ি হাঁস, হাঁস ডিঙ্গি, কাদা খোঁচা, খয়রা, চেগা, কাচিচোরা, মদনটাক, শামুখখোলা ও বক।
এক শ্রেণীর অসাধু শিকারিরা পাখি ধরে বিক্রি করছে। অতিথি পাখি শিকারের জন্য এবার শিকারিরা প্রযুক্তির ফাঁদসহ অভিনব কৌশল ব্যবহার করছে। যে কারণে এ অঞ্চলে অতিথি পাখির বিচরণ ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ তাদের মরণ ফাঁদে পরিণত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতীতে মাছ ও ফড়িং দিয়ে ফাঁদ পেতে, কীট-পতঙ্গের সাথে কীটনাশকের বিষটোপ দিয়ে, খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে, বড়শি ও কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করা হতো।
তবে বর্তমান প্রযুক্তির যুগে পাখি শিকারি চক্র প্রযুক্তির সহায়তায় পাখিদের বোকা বানিয়ে সহজেই তাদেরকে শিকার করেছে। তারা ওই সব পাখির ডাক আগে থেকেই ডাউনলোড করে পোর্টেবল সাউন্ড-বক্সে ঢুকিয়ে রাখে। যেখানে পাখিদের আনাগোনা বেশি সে সব বিল ও জলাশয়ের বৃহৎ এলাকা জুড়ে জালের ফাঁদ পেতে ঘিরে তার মাঝখানে ওই পোর্টেবল সাউন্ড-বক্সে পাখির ডাক বাজানো শুরু করে। আর ওই ডাক শুনে সতীর্থদের নিরাপদ অবস্থান মনে করে পাখিরা শিকারির পাতা ফাঁদের মধ্যে নামতে শুরু করে। আর ওখানে নামলেই পাখিরা ফাঁদে আটকে যায়।
এভাবে প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে অভিনব কায়দায় পাখি নিধনের কর্মযজ্ঞ। তারা জানায়, রাতে শিকার করা এসব পাখি সূর্যের আলো দেখার আগেই বিক্রি হচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ক্রেতার কাছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পেশাদার পাখি শিকারি বলেন, বাজারে অতিথি পাখির চাহিদা খুব বেশি। ধরতে পারলে বিক্রিতে কোন সমস্যা নেই। অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখেন। ফলে ভোর রাতেই পাখি তাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়।
পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েস এর প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, শিকারীদের ভয়াবহ ছোবল থেকে মুক্ত হতে পারছে না পাখিগুলো। এসব পাখি নিধনের কারণে একদিকে জীব-বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ বাড়ছে। পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে না, ভারসাম্যও রক্ষা করে।
জেলার কালিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেছেন, বিষয়টিতে তিনি এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাননি। অতিথি পাখিসহ সকল বন্যপ্রাণী দেশের সম্পদ। তাদের রক্ষা করা সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। তিনি খোঁজ নিয়ে ও থানা পুলিশের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা ২০১২ আইনের ৩৮ (১) ধারা মোতাবেক অতিথি পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। শিকারিদের শনাক্ত করতে পারলে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।