খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি
আর্থিক ক্ষতিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

দু’বছরেও শুরু হয়নি দিঘলিয়ার মডেল মসজিদ নির্মাণ

একরামুল হোসেন লিপু, দিঘলিয়া

কার্যাদেশ দেওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা কমপ্লেক্স এ একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল । কিন্তু কার্যাদেশ দেওয়া দুই বছর অতিবাহিত হলেও নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে একদিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে পুরাতন মসজিদ ভেঙ্গে ফেলায় জামাতে নামাজ আদায়ে মারাত্মক অসুবিধায় পড়েছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসল্লিরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ থেকে ২০১৯ সালের জুন মাসে কার্যাদেশ দেয়া হয় খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা কমপ্লেক্স এ একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের। কার্যাদেশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে টিচবি- মামুন (জেভি) কন্সট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। কিন্তু বিপত্তি বাধে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে।

খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ইসলামী ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি “মডেল মসজিদ” ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

এ প্রকল্পের আওতায় খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা সদরে ৩১ শতক জায়গার উপর সোয়া ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের স্থান নির্ধারণ হয়। ২০১৯ সালের ১৬ জুন খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ লতিফুল ইসলাম উপরোক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। কার্যাদেশের কাজের মেয়াদ উল্লেখ করা হয় ১৮ মাস। সেই হিসাবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলমের সঙ্গে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় এ মসজিদটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য শুরু থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অত্র উপজেলায় যোগদানের পর থেকে আমি জেলা প্রশাসক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। ৯ মাস পূর্বে খুলনা জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণের শাখার মাধ্যমে আমরা জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ অধিগ্রহণ প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমি অধিগ্রহণের ফান্ড না থাকার কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে।’

তিনি আরো জানান, মসজিদের লে-আউট দিতে গিয়ে দেখা যায় মসজিদের কেবলার অবস্থান হবে কৌণিক আকারের। যে কারণে প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রথমাবস্থায় কিছু জমির মালিক প্রস্তাবিত মসজিদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়ে সমপরিমাণ জায়গা অন্য স্থান থেকে নিতে চাইলেও পরর্তীতে তারা সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।

জমি অধিগ্রহণের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর মোঃ নাজিবর রহমানের কাছে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের ফান্ড না থাকার কারণে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে। একই প্রজেক্ট এর ৫০ টি মসজিদের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি মসজিদগুলোর নির্মাণ কাজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ফান্ড দ্রুতই হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।’

এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টিচবি -মামুন (জেভি) কন্সস্ট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারী গাজী মাসুদ রানা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৬ জুন কার্যাদেশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করি। আমরা পাইলিং কাস্টিং এবং পাইলিং রেডি করি। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার কারণে ড্রাইভ এর কাজ শুরু করতে পারিনি। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে আমরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। ইতিমধ্যে মসজিদ নির্মাণ কাজের জন্য আমরা প্রায় তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। প্রস্তাবিত মসজিদ তৈরির জায়গার উপর আমাদের নির্মাণ সামগ্রী রড, সিমেন্ট, পাথর প্রায় এক বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এ ব্যাপারে আমরা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

অন্যদিকে প্রস্তাবিত মডেল মসজিদ নির্মাণের স্থানে থাকা পুরানো মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। যে কারণে দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। বর্তমানে মুসল্লীরা পুরাতন উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে নামাজ আদায় করছেন।

সৌদি আরবের আদলে গড়া অত্যাধুনিক এ মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মিত হলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর সকল কার্যক্রমের এখান থেকে পরিচালিত হবে। ইসলামের প্রচার ও প্রসার এবং জঙ্গীবাদ বিরোধী প্রচারণা এ সকল মসজিদ থেকে চালানো হবে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!