খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত
পবিত্র রমজান মাসেও খোলামেলা পরিবেশ

ডুমুরিয়ায় হোটেল রেস্তোরা গুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচাবাসি খাদ্য বিক্রি

গাজী আব্দুল কুদ্দুস,ডুমুরিয়া

ডুমুরিয়ায় অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরা গুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচাবাসি ও নিন্মমানের খাদ্য সামগ্রী বিক্রয় করা হচ্ছে। রমজানের পবিত্রা নষ্ট করে খোলামেলা পরিবেশে এ খাবার গুলো বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে রমজানের মধ্যেই অভিযানের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

চুকনগর গ্রামের আব্দুস সবুর সরদার জানায়, এক শ্রেণীর অতি মুনাফা লোভী অসাধু ব্যবসায়ী আইন কানুনের প্রতি কোন তোয়াক্কা না করেই হোটের গুলোর পচা-বাসি ও নিম্নমানের খাদ্য সামগ্রী নির্বিঘ্নে বিক্রয় করছে। এসব খাবার খেয়ে প্রতারিত ও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা। তাছাড়া অধিকাংশ হোটেল মালিকরা রমজানের পবিত্রা নষ্ট করে খোলামেলা পরিবেশে হোটেল খোলা রেখে খাবার বিক্রয় করছে।

বিশেষ করে উপজেলার চুকনগর বাজারটি হোটেলের বাজার নামে পরিচিত। এটি উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বানিজ্যিক নগরী। এটি খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার সংযোগস্থল হওয়ায় অন্যান্য বাজারের চেয়ে এ বাজারের শুরুত্ব অনেক বেশী। তাছাড়া বিভাগীয় শহর খুলনার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত। প্রতিদিনই দূর-দূূরান্ত হতে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ চলাচল করে এ বাজারের উপর দিয়ে। দূর-দুরান্ত হতে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বানিজ্য করতে আসে এ বাজারে।

এখানকার হোটেল রেস্তোরা গুলোতে বিশেষ করে মাংশ বিক্রয়ের হোটেল গুলো বাংলাদেশের বিখ্যাত হোটেল নামে পরিচিত। এ সব হোটেল গুলোতে বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিরা আসে এখানকার রান্না করা খাশির ও গরুর মাংশ খেতে। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তাদের হোটেল রেস্তোরা গুলোতে পচা-বাসী ও নিন্মমানের খাদ্য সামগ্রী নির্বিঘ্নে বিক্রয় করছে।
মাঝে মধ্যে খাদ্য সামগ্রী কম বিক্রয় হওয়ার কারণে মিষ্টির হোটেল গুলোতে ২/৩ দিনের পচা-বাসী বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি রেখে বিক্রয় করা হচ্ছে। তাছাড়া খোলা বাজারে রং মিশ্রিত ভেজাল ও নিম্নমানের পেয়াজী, সিঙ্গড়া, বিভিন্ন ধরনের চপ, ছোলাসহ হরেক রকমের অনুপযোগী খাদ্য বিক্রয় করা হচেছ। ভাতের হোটেল গুলোতে ভেজাল মরিচ ও মসলার গুড়ো দিয়ে মাছ, মাংশ ও তরি-তরকারী রান্না করা হচেছ।

প্রায় প্রতিদিনই বাসী মাছ ও মাংশের ঝোলের সাথে পরের দিন নতুন ভাবে রান্না করা মাছ ও মাংশ এর সাথে মিশিয়ে খরিদ্দারের কাছে বিক্রয় করা হচ্ছে। এসব খাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে পেটের পীড়া, আমাশা, জন্ডিস ও গ্যাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যধিতে । কিন্তু সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এসব রোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পচা-বাসি ও নিম্নমানের খাদ্য বিক্রয়ের অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পথচারী ও সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা অসৎভাবে উপার্জন করছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আবার অনেকে সেনেটারীর কোন লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ভেজাল কারবার।

এ ব্যাপারে এনামুল হোসেন গাজী নামে একজন ক্রেতা বলেন,বাইরে থেকে দেখতে ভাল ও উন্নতমানের ফার্ণিচার এবং আসবাস পত্র সমূদ্ধ চাকচিক্যপূর্ণ হোটেল রেস্তোরা গুলোর পিছনের দিকে নোংড়া ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ একেবারে খোলামেলা হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আপত্তি জানালে হোটেল মালিক ও শ্রমিকরা গ্রাহকদের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করে।

খুলনার আইনজীবি মতিয়ার রহমান বলেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশের ২৩নং ধারায় বলা হয়েছে দুধ, কেক, রুটি, পরাটা, সামেছা, লুচি, সিংড়া, ডাল, পরাটা, ভাত, মিষ্টান্ন ও অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য বাসী করে বিক্রয় করা যাবে না। আবার ২৪নং ধারার ৩নং উপধারায় বলা হয়েছে, হোটেল রেস্তোরা ও কনফেশনারীর ছাদ, মেঝে, জানালা-দরজা ও অন্যান্য অংশ অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ৪নং উপধারায় বলা হয়েছে, এসব স্থান কোন মানুষের বসবাসের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারবে না। ৮নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, হোটেল-রেস্তোরা কনফেশনারী কাজে নিয়োজিত লোকদের অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধান করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরা গুলোতে উপরে উল্লেখিত নিয়ম কানুনের কোন বালাই নেই।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ, আমরা জানি প্রতিটি হোটেল রেস্তোরা গুলোতে পচা-বাসী ও নিম্নমানের খাবার বিক্রয় করা হচ্ছে। এ জন্য আমরা ইতোমধ্যে ডুমুরিয়া, শাহাপুর, খর্নিয়া, আঁঠারমাইল ও চুকনগরসহ কয়েকটি বাজারে বেশ কয়েকবার স্বল্প পরিসরে অভিযান চালিয়েছি। এরপরেও যদি কেই অনিয়মের আশ্রয় নেয়। তাহলে আমরা আবারও অভিযান পরিচালনা করব এবং এসব অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!