খুলনার ডুমুরিয়ায় মাগুরখালী ইউনিয়নে সুকনদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানি সেচে চলছে মাছ শিকার।
নদীর জলমহল ইজারা নিয়ে যেখানে সেখানে এভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। নদীতে বাঁধ দেওয়ায় যেমন হারাচ্ছে নাব্যতা, তেমনি নদীতে পানি না থাকায় ধ্বসে যাওয়ার হুমকীতে পড়েছে এলজিইডি’র ৪ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের সড়ক। এদিকে পানির অভাবে বোরো ধান চাষে ক্ষতির সম্মুকে পড়েছে অসংখ্য কৃষক।
জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুকনদীর বদ্ধ জলমহলটি জুলাই/২২ থেকে এপ্রিল/২৩ পর্যন্ত স্থানীয় অনুকুল চন্দ্র মন্ডল ইজারাপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন জনকে তিনি সাব-ইজারা দিয়েছেন। সম্প্রতি অনিয়মভাবে নদীতে কয়েকটি স্থানে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানি সেচে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে নিধন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনা এবং নষ্ট হতে বসেছে জীববৈচিত্র। শুধু তাই নয় সুকনদীর সাথে আলাদিপুর-মাগুরখালী বিলের রয়েছে একটা গভীর সম্পর্ক। প্রায় বছর জুড়ে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল ও তেল-সারা আনা-নেওয়ার কাজে এ নদী পথ ব্যবহার করে থাকে। নদীটি সেচ দেওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান ক্ষেতে পানি ধরে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এতে বেশি বিপাকে পড়েছে নদীর পাশের বোরো চাষীরা।
আলাদিপুরের কৃষক গোবিন্দ মন্ডল জানান, সুকনদীর পাশে ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। ধান ক্ষেতে এখন পানি রাখার সময়। কিন্তু নদী শুকিয়ে ফেলায় ক্ষেতে পানি ধরে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
এদিকে খালের সাব-ইজারাদার জিল্লুর রহমান বলেন, খালটির একটি অংশ ২লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে আমি কিনেছি অনুকুল মেম্বরের নিকট থেকে। আমি তার (অনুকুল) অনুমতি নিয়ে খালে বাঁধ দিয়ে সেচের কাজ করি।
সাবেক মেম্বর সুকুমার গোলদার জানান, এই মুহুর্তে নদীতে পানি সেচ দিলে বোরো ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এমনিতে এবছর বর্ষা-বাদল নেই, পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এরপর যদি নদীর জল শুকানো হয় তাহলে তো কৃষকরা বিপাকে পড়বেই। তিনি বলেন, ধান চাষ হয়ে গেলে পানি সেচ দিলে কৃষকের এতো বড় ক্ষতি হতো না।
মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা বলেন, অবৈধভাবে সুকনদীর জলাশয়ে একাধিকস্থানে আড়াআড়ি বেঁধে সেচ দিয়ে মাছ ধরছে। এতে নদীটি যেমন নাব্যতা হারাবে তেমনি দেশীয় মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। পাশাপাশি নদী শুকানো কারণে ৪ কিলোমিটার এলজিইডি’র কার্পেটিং সড়কটি ধ্বসে যাওয়ার হুমকীতে পড়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে রেজুলেশনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, সরকারি নদী বা জলাশয়ে সেচ দিয়ে মাছ ধরা দন্ডনীয় অপরাধ। তাছাড়া এতে দেশীয় প্রজাতির মাছ গুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এখনি আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ আসিফ রহমান বলেন, খবর পেয়ে সুকনদী সেচের কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেছি। তাছাড়া সুকনদীর জলাশয় ইজারা বন্ধের প্রক্রিয়া চলছে।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদ