খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার
আদালতে স্বীকারোক্তি ঘাতক মৃন্ময়ের

টিকটকে অন্তরঙ্গ ছবি পোস্ট করায় তরণীকে শ্বাসরোধে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ ছবি মোবাইলে ধারণ করে টিকটকের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে একাধিকবার টাকা দাবি করার কারণেই নৃত্যশিল্পী খাদিজা খাতুন মিতু কর্মকারকে হত্যার পরিকল্পনা করে তার স্বামী। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) যশোর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছেন হত্যা মামলার আসামি ঘাতক স্বামী মৃন্ময় ভদ্র নিলয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার সরোয়ার হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় নিহতের মা সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা উপজেলার ধানদিয়া গ্রামের আজগর আলীর স্ত্রী নাসিমা বেগম গত ২৪ এপ্রিল যশোর কোতোয়ালি থানায় নিলয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

গত ২৪ এপ্রিল যশোর সদর উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের বুকভরা বাওড়ের পাড় থেকে খাদিজা খাতুন মিতু কর্মকারের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মিতু সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা উপজেলার ধানদিয়া গ্রামের চৌরাস্তার আজগর আলীর মেয়ে।

যশোর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিতে মৃন্ময় ভদ্র নিলয় জানিয়েছেন, খাদিজা খাতুন মিতু তার সাবেক স্ত্রী। মিতু একজন নৃত্যশিল্পী ছিলেন। কয়েক বছর আগে নিলয়ের সাথে তার পরিচয় এবং বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের আগে মিতু সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিলেন না। বিয়ের সময় তিনি সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেন। তার সাথে কিছুদিন সংসার করার পরে প্রায় তিন বছর আগে নিলয়ের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে মিতুর। ওই সময়ে নিলয়ের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছিলো মিতু। কিছুদিন পর আবারো সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করেন। কিন্তু তিন বছর আগে নিলয়কে ছেড়ে দিলেও ওই সময়ের স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের কিছু ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করেছিলেন মিতু। আর সেই ছবিগুলো টিকটকের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নিলয়ের কাছ থেকে একাধিকবার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে কারণে মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নিলয়। গত ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যার পরে নিলয় সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থেকে মিতুকে নিয়ে যশোরে আসেন। এরপর রাত ১১টার দিকে তাকে নিয়ে বুকভরা বাওড়ের পাশে গিয়ে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যার পর মৃতদেহ সেখানে ফেলেই চলে যায় নিলয়। কিন্তু মিতুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি সেখানেই পড়ে থাকে। পরদিন সকালে সেখানে গ্রামবাসী মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে। এরপর আটক হয় ঘাতক মৃন্ময়।

এ ঘটনায় নিহত মিতুর মা নাসিমা বেগম কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে তিনি বলেছেন, ৯ বছর আগে তার মেয়ে খাদিজাকে সাতক্ষীরা সদরে রফিকুল ইসলাম বাবু ওরফে চোর বাবু নামে এক যুবকের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। দাম্পত্য জীবনে মরিয়ম সুলতানা নামে তাদের একটি মেয়ের জন্ম হয়। বর্তমানে তার বয়স আট বছর। তবে মেয়েটির জন্মের পরে খাদিজার স্বামী তাকে ফেলে অন্যত্র চলে যায়। এরপরে জীবিকার তাগিদে সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ গান করে। আর নাচ গান করাকালে মৃন্ময় ভদ্র নিলয়ের সাথে তার পরিচয় হয়। নিলয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাদিজাকে সাথে নিয়ে যেতো। পাশাপাশি তাদের বাড়িতেও মাঝেমধ্যে যাতায়াত করতো নিলয়। আর নাচ গানে মাধবী নামে অনেকে খাদিজাকে চিনতো। পাশাপাশি নিলয়ে সাথে খাদিজার তোলা কিছু ছবি ও ভিডিও দেখে অনেকে বলেছে তোমার মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে নিলয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে। তবে খাদিজার কাছে জিজ্ঞাসা করলে সে অস্বীকার করতো।

গত ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটা অনুষ্ঠানে কাজ আছে বলে খাদিজাকে সাথে নিয়ে রওনা দেয় নিলয়। এরপর রাত ৮টায় ফোন করলে খাদিজা জানায় তার বাড়িতে যেতে দেরি হবে। রাতে ফোন করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ২৪ এপ্রিল সকালে স্থানীয় মেম্বর আনিছুর গাজী জানায়, খাদিজার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে যশোরের পুলিশ। হাসপাতালে এসে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!