দেশের বৃহত্তম দুটি ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যশোরের দু’সন্তান। যা নিয়ে গর্ব অনুভব করছে যশোরের মানুষ। ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ দু’ নেতাকে নিয়ে জেলা জুড়ে চলছে ইতিবাচক সব আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় এ দু’নেতাকে নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। যশোরের মানুষের কথা একটিই ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের চালিকাশক্তি বর্তমানে যশোরের দু’ নেতা লেখক ভট্টাচার্য্য ও কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের হাতে।
রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পাঁচ নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে সভাপতি হয়েছেন যশোরের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। বাবার নাম কাজী রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নে।
একইভাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যরে বাড়িও যশোরে। তার বাড়ি মণিরামপুর উপজেলার পাড়ালা গ্রামে। বাবার নাম দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। মা শ্রিপা ভট্টাচার্য্য। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে শ্রাবণ এবং ছাত্রলীগকে লেখক নেতৃত্ব দিয়ে দেশের ছাত্রসমাজের কল্যাণে কাজ করবেন এমন প্রত্যাশা যশোরের শিক্ষার্থীদের।
কেশবপুরের সন্তান কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ায় আনন্দ বিরাজ করছে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের মধ্যে। আনন্দ মিছিল ও মিষ্টিমুখ করা হয়েছে কেশবপুরেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেশবপুর কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি শ্রাবণের। এরপর ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হাজি মুহাম্মদ মহসিন হলে থেকে ছাত্রদলের সব কার্যক্রমে অংশ নেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টিতে আসেন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী রফিকুল ইসলামের ছেলে শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। কাউন্সিলে মাত্র আট ভোটে হেরে গিয়ে তিনি সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পান।
ছাত্রদলের মেয়াদ শেষ হলে তিন বছরের মাথায় ১৭ এপ্রিল ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি পদে উঠে আসে শ্রাবণের নাম। এর আগে তিনি রাজিব-আকরাম কমিটিতে সহসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে, নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে শোভন-রব্বানীকে সরিয়ে দেয়ার পর ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন যশোরের সন্তান লেখক ভট্টাচার্য্য। এরপর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পূর্ণাঙ্গ সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। এর আগে লেখক ভট্টাচার্য্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ হলের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
লেখক ভট্টাচার্য্য যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে ভর্তি হন। এরপর হল, বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দেন এ ছাত্রনেতা। ফলস্বরূপ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সারাদেশে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
কেশবপুরের ছেলে শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ার পর নতুন করে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ পরিবারের ছেলে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদে যাওয়াকে অনেকে বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণে পরিবার থেকে আলাদা হওয়াকে দেখছেন ভিন্নরূপে। এ কারণে সদ্য নির্বাচিত ছাত্রদলের সভাপতি শ্রাবণের সাথে গত একযুগ পরিবারের কোন সম্পর্ক নেই। এ সময়ে তিনি যশোরের বাড়িতেও আসেননি।
খুলনা গেজেট/ টি আই