এক একটি ধানের শীষে কত না স্বপ্ন কৃষকের, সেই ধান পাকার আগেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গাছে শুকিয়ে যাচ্ছে। আকাশসম স্বপ্ন নিয়ে কৃষকের যে যাত্রা শুরু তা যেন মুহূর্তে ভেঙে খানখান হয়ে গেছে।
চলতি বোরো মৌসুমে চৌগাছার বিভিন্ন এলাকার মাঠে ভারাইসে আক্রান্ত হয়ে ধান নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে জগদীশপুর মাঠে আক্রান্তের হার বেশি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও পাওয়া যাচ্ছেনা সঠিক কোন প্রতিকার।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে চৌগাছাতে সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে নানা জাতের বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে উফশি- ব্রি ধান ২৮, ৫০, ৫৮, ৬৩, ৮৯, ৮৮, ৮১, ৯২ এবং বঙ্গবন্ধু ১০০ জাতের ধান চাষ হয়েছে। এছাড়া রড মিনিকেট ও সুভলতা ধানের চাষের পাশাপাশি হাইব্রিড জাত তেজগোল্ড, হাইব্রিড-৩ ও ৫ জাতের ধানের চাষ হয়েছে।
ধান রোপণ থেকে শুরু করে শীষ বের হওয়া পর্যন্ত আবহাওয়া ছিল বোরো চাষের অনুকূলে। সে কারণে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার মাঠগুলোতে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করেন সবাই। ধানের ভাল ফলন হবে এই আশায় হাজারও স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কৃষক। ধান উঠার পর দায়দেনা পরিশোধের পাশাপাশি অনেক কিছুই করার স্বপ্ন নিয়ে দিন পার হচ্ছিল তাদের। আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই ধান ঘরে আসার কথা, কিন্তু হঠাৎ এক ভাইরাসে সব কিছুই যেন এলোমেলো করে দিয়েছে গ্রামের হত দরিদ্র এসব কৃষকের।
ধান ভাইরাসে যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে তাতে ১ বিঘায় ৭/৮ মন ধান হবে কিনা সন্দেহ মনে করছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর পাওয়া গেলেও জগদীশপুর, মুক্তদাহ, বিশ্বনাথপুর গ্রামের মাঠে এই ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আগামীতে কিভাবে কৃষক দায়দেনা পরিশোধ ও পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
জগদীশপুর ও বিশ্বনাথপুর গ্রামের কুঠিরমাঠ, মড়মড়ে, বাঘগাড়ি, দক্ষিণ মাঠসহ বেশ কিছু মাঠ ঘুরে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ধান নষ্টের দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় কথা হয় কৃষক আইনাল হক, হযরত আলী, রোকনুজ্জামান, রবিউল ইসলাম, কাশেম, মুরাদ আলী, শামীম হোসেন, আক্তার হোসেন, আশানুর রহমান, গোপাল, কানু দাস, রফি উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে। কৃষকরা জানান, ধান রোপণের পর হতে কোন সমস্যা ছিলোনা।
এমনকি শীষ বের হওয়ার সময় ধানের কোন সমস্যা দেখিনি। যখনই শীষে ধান হওয়ার উপক্রম হতে থাকে সেই সময়ে প্রতিটি শীষ সাদা হয়ে শুকিয়ে যায়। এক দু বিঘা না, বিঘার পর বিঘা ধানের এই পরিস্থিতি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করা ধান অনেক চেষ্টা করেও রক্ষা করতে পারিনি। কৃষকরা অভিযোগ করেন, কৃষি অফিস থেকে ধান রক্ষায় তেমন কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। শুকিয়ে যাওয়া ধান অনেক চাষি বুকের সাথে আগলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কৃষকের অভিযোগের বিষয়ে জগদীশপুর ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, আমি নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করার পাশাপাশি কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতা করি। ধানের ভাইরাসের ব্যাপারেও কৃষককে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে এবং যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, মুলত বিআর-৬৩ জাতের ধানে ব্লাস্ট ভাইরাস দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও বাতাসে আদ্রতা বেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে ধানের শীষ বের হয়েছে। এছাড়া ধানের শীষ বের হওয়ার সময় এ অঞ্চল দিয়ে একটি বড় বাতাস বয়ে যায়। এসব কারণে ধান ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। আমরা খবর পাওয়ার সাথে সাথে কৃষককে ধান ক্ষেতে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি রাখার পাশাপাশি ধানে ছত্রাক নাশক ও পটাশ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে আসছি।
খুলনা গেজেট/ এসজেড