যশোরের চৌগাছায় এক রাতে ছয় দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ভোর রাত ছয়টার দিকে চৌগাছা শহরের ৫টি গার্মেন্টস ও একটি কৃষি পার্টসের দোকানে এই চুরির ঘটনা ঘটে। সকালে চুরি যাওয়া দোকান পরিদর্শনে গেলে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের উপর হামলার চেষ্টা চালায় একদল উশৃঙ্খল ব্যক্তি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এসময় চোরেরা শহরের এ্যানি সুপার মার্কেটের ঢাকা ফ্যাশনের ক্যাশ ভেঙে নগদ চল্লিশ হাজারের কিছু বেশি, সাক্স টেইলার্সের ৫ হাজার ৬শ এবং পাশের একটি মার্কেটের সবুজসাথী বস্ত্রবিতান থেকে ২৫ হাজার এবং কামিল মাদরাসা সড়কের রাশেদের কৃষি পার্টসের দোকানের ক্যাশবাক্স ভেঙে ৫/৭ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া এ্যানি সুপার মার্কেটের বাবুল গার্মেন্টস ও পাশের মার্কেটের মায়ের আঁচল নামে দুটি গার্মেন্টসের দোকানের সার্টার উঁচু করে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে চলে যায়।
চোরেরা অভিনবভাবে ইট ও বাশের সাহায্যে দোকানের সার্টার উঁচু করে ভেরতে ঢুকে চারটি দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। অন্যদুটি দোকানের সার্টার উঁচু করেও ভেতরে ঢুকতে না পেরে চলে যায় তারা। এসময় এ্যানি সুপার মার্কেটের ঢাকা ফ্যাশন নামে একটি দোকানের সিসিটিভির তার ছিড়ে রেখে যায় তারা।
শহরের সবুজ সাথী বস্ত্রালয়ের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শনিবার ভোর ৬ টা ১৩ মিনিটে দোকানের সার্টার উঁচু করে ভেতরে ঢুকে চোরটি সোজা ক্যাশ বাক্সের কাছে চলে যায়। সেখানে কিছু একটা দিয়ে ক্যাশবাক্স খুলে টাকা চুরি করে পালাবার সময় ক্যাশ বাক্সের পাশ থেকে একটি প্যাকিং করা কম্বল নিয়ে যায়। মাত্র দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই দোকানটির চুরি সম্পন্ন করে চোরেরা। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় চোরের ২০/২২ বছরের পাতলা গড়নের চোরটির বাম পায়ে একটি কালো ব্যান্ড পরা ছিলো। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে নেশাখোর ছিচকে চোরেরা এই চুরি করেছে।
শহরের কামিল মাদরাসা সড়কের রাশেদ হোসেনের কৃষি পার্টসের দোকানে ঢুকে ক্যাশ বাক্স থেকে ৫ থেকে ৭শ টাকা নিয়ে গেছে। দোকানি রাশেদ জানান তার ক্যাশেরবাক্সের পিছনের অন্য একটি বাক্সে ১৩ হাজার টাকা থাকলেও সেটি নিতে পারেনি। সামনের বাক্স থেকে ৫/৭শ টাকা নিয়ে চলে যায়। পাশের দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় সবুজ সাথী বস্ত্রবিতানে যে চোর প্রবেশ করেছিলো একই চোর রাশেদের দোকানেও প্রবেশ করে। তবে এখানে তার সাথে গায়ে চাদর পরা অন্য একজন চোরকেও দেখা যায়।
এদিকে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই দোকান বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন ২/৩শ ব্যবসায়ী। এসময় শহরের জামে মসজিদ সড়কের চুরি যাওয়া একটি দোকান পরিদর্শনে যান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ইবাদৎ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আজিজুর রহমান এ্যাডমিরাল এবং ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদকের ভাই। এক পর্যায়ে সেখানে তাদের উপর হামলা করে একদল উশৃঙ্খল ব্যক্তি। পরে চৌগাছা থানার ২য় কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ চুরি যাওয়া দোকান পরিদর্শন করে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহে নেন এবং পুলিশকে তরিৎ যে কোনো মূল্যে চোর ধরার জন্য নির্দেশনা দেন।
বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী ইবাদৎ হোসেন বলেন, বাজারের নাইটগার্ডরা ফজরের আজানের সময় ডিউটি শেষ করে চলে যান। ফজরের জামায়াত হয় ৬টার পর। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বোঝা যায় মুসল্লিরা যখন নামাজে দাড়িয়েছেন অথবা নামাজ শেষে চলে গেছেন ঠিক সেই সময়ে চোরেরা অভিনবভাবে দোকানের প্রবেশ করে চুরি করেছে।
এবিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, সিসিটিভিতে দেখে বোঝা যায় ছিচকে চোরেরা এই চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের দেখানোর জন্য বিকেলে সময় দেয়া হয়েছে। ফুটেজ দেখে কেউ না কেউ চোর শনাক্ত করতে পারবেন। যে কোনো মূল্যে চোর ধরার জন্য পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। আশা করছি এই চোর অবশ্যই ধরা সম্ভব হবে।