যশোরের চৌগাছার সীমান্তবর্তী দৌলতপুর গ্রামের পাশেই ইন্ডিয়াপাড়া। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তিন পাশে বাংলাদেশ আর এক পাশে ভারত সীমান্ত। দৌলতপুর গ্রামের মানুষের সঙ্গে ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। কোনো সীমারেখাই তাদের চলাফেরা, লেনদেন ও সামাজিক বন্ধনে বাধ সাধতে পারে না। বিজিপির চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে অবাধ চলাচল।
ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দারা ভারতের বাগদা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে থাকে। আবার তারা বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরেও অবাধ ঘুরাফেরা করে। এতে দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে । এলাকাবাসী ইন্ডিয়াপাড়ার চারপাশে বিজিবি টহল আরো জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, সীমান্তবর্তী সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম দৌলতপুর। গ্রামটি ভারত ঘেঁষা। ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার বাংলাদেশের ভেতরে একটি গ্রামে বসবাস করেন ভারতীয় নাগরিকরা। যা ইন্ডিয়াপাড়া বলে পরিচিত। এখানে ৮০/৮৫ টি পরিবার রয়েছে। জনসংখ্যা দেড় শতাধিক। ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দারা ভারতের নাগরিক হলেও অবাধে বাংলাদেশ অংশে যাতায়াত করেন। সরেজমিনে গিয়ে সীমান্তবর্তী দৌলতপুর গ্রামে অবাধ যাতায়াতের প্রমাণও মিলেছে।
সীমান্তবর্তী ৪৩ নম্বর পিলার সংলগ্ন বাংলাদেশ অংশের সড়কে বাইসাইকেল চালাতে দেখা যায় ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দা ও ভারতের নাগরিক আবুল কাশেমকে। তিনি মুখে মাস্ক পরিধান না করেই ঘোরাফেরা করছেন। এ সময় কথা হয় আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েক যুগ ধরে ইন্ডিয়াপাড়াতে বসবাস করছি। কেনাকাটা করতে যাই নিজ দেশের (ভারত) বাগদা বাজারে। কিন্তু করোনার কারণে আমরা বাগদা বাজারে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। জমি জায়গা সব ভারতের মধ্যে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে। ছোটবেলা থেকেই এভাবেই চলাচল করি।
দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা শুনতে পারছি বাগদা বাজারসহ সীমান্তঘেঁষা গ্রামেও করোনা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। ফলে ইন্ডিয়াপাড়াতেও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় আছি। কারণ বাগদা বাজার এলাকার আশেপাশে গ্রামে আত্মীয়-স্বজন আছে।
দৌলতপুর গ্রামের পাশের গ্রাম বড় আন্দুলিয়ার বাসিন্দা কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের অবাধ চলাচলে আমরা বেশ চিন্তিত। ভারতের মতো এই এলাকাতেও যেকোনো সময় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সময় ইন্ডিয়া পাড়ার পাশে বিজিবি টহল আরো জোরদার করার দাবি জানান তিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান ও দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা তোতা মিয়া জানান, করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট নিয়ে তারা চিন্তিত। ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের নিজ পাড়া থেকে বাইরে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দৌলতপুর গ্রামবাসীকেও তাদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আন্দুলিয়া বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার মো. শাহীনুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্টের বিষয়ে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। এরই মধ্যে দৌলতপুর গ্রাম এলাকাতে আমরা টহল জোরদার করেছি। ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের কোনোক্রমেই আমাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
খুলনা গেজেট/ এস আই