খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুইজন নিহত
  মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭
  সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ

ঘুম কেড়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, সুষ্ঠু নির্বাচন চান চিতলমারীবাসী

চিতলমারী প্রতিনিধি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের চিতলমারীর ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন। এদিন উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৩টিতে চেয়ারম্যান পদসহ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ৪টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের একক প্রার্থী থাকায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে না। ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই তাঁরা চারজন নির্বাচনী তরি পার হয়েছেন। এখন শুধু ঘোষণার পালা।

সাধারণ ভোটারদের মতে, বিপাকে আছেন (নৌকা মার্কা) দলীয় তিন প্রার্থী। তাঁদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কারণ স্বতন্ত্ররাও দলের এক সময়ের বাঘা বাঘা নেতা। দলের জন্য তাঁদেরও অবদান কম নয়। তাই সকলেই চান অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। মানুষ এখন আর সহিংসতা চায় না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চিতলমারী উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়েছেন, চিতলমারী সদর ইউনিয়নে মোঃ নিজাম উদ্দিন শেখ, চরবানিয়ারী ইউনিয়নে অর্চনা দেবী বড়াল (ঝর্ণা), সন্তোষপুরে সামিয়া রহমান বিউটি, শিবপুর ইউনিয়নে অলিউজ্জামান জুয়েল, হিজলায় কাজী আবু সাহিন, বড়বাড়িয়ায় মো. মাসুদ সরদার ও কলাতলা ইউনিয়নে মো. বাদশা মিয়া।

উপজেলা নির্বাচন অফিস হতে জানা গেছে, এখানে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ১৮ মার্চ। বাছাইয়ের তারিখ ছিল ১৯ মার্চ। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২৪ মার্চ। কিন্তু ২৪ মার্চ তারিখে শিবপুর, সন্তোষপুর, হিজলা ও চরবানিয়ারী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থীরা ছাড়া সকলেই প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। বাকি বড়বাড়িয়া ইউনিয়নে মো. মাসুদ সরদার (নৌকা), ওয়াহিদুজ্জামান পান্না (আনারস), কলতলা ইউনিয়নে মো. বাদশা মিয়া (নৌকা), শিকদার মতিয়ার রহমান (আনারস), মো. আলমগীর সিদ্দিকি (মোটরসাইকেল), মো. ফরিদ শেখ (ঘোড়া), চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদে মো. নিজাম উদ্দিন শেখ (নৌকা) ও মো. সাহেব আলী ফরাজী (আনারস) প্রতীকে প্রার্থী রয়েছেন। আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে তারা প্রতিদ্বন্দিতা করবেন।

কলাতলা ইউনিয়নের সাধারণ ভোটার আক্তারুজ্জামান, জহির শেখ, ফুল মিয়া, বড়বাড়িয়া মিরাজ শেখ, আজম মেম্বার, আজগর আলী, চিতলমারী সদর ইউনিয়নের আবু সাঈদ মুন্সি ও মনি মোহন বিশ্বাসসহ অনেকে জানান, বিপাকে আছেন (নৌকা মার্কা) দলীয় তিন প্রার্থী। তাঁরা একক ৪ প্রার্থীর মত আরামে ঘুমাতে পারছেন না। তাঁদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কারণ স্বতন্ত্ররাও দলের এক সময়ের বাঘা বাঘা নেতা। দলের জন্য তাঁদেরও অবদান কম নয়। তাই সর্বস্তরের মানুষ এখন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান। কারণ মানুষ এখন আর সহিংসতা চায় না।

এ ব্যাপারে কলাতলা ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী ও কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাদশা মিয়া বলেন, আমি ছাড়া আমার ইউনিয়নে আরও তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা তিনজনে যে ভোট পাবে আমি একাই তাঁদের দ্বিগুণ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হব।

কলাতলা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস মার্কার শিকদার মতিয়ার রহমান বলেন, আমি ১৯৭০ সাল থেকে ৫১ বছর আওয়ামী লীগ করি। ১৯৭৫ সালে ভোটার হই। ২১ বছর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওয়ার্ড মেম্বার ছিলাম। ১৮ বছর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম এবং ১৮ বছর ধরে কলাতলা ইউনিয়নের চেয়াম্যান আছি। জন সাধারণ শান্তিতে-স্বস্তিতে ভোট দিতে পারলে আমিই পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হব। আমি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাই কোন প্রার্থী যেন সহিংসতা ছড়াতে না পারে।

চিতলমারী সদর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, জয় আমাদের সুনিশ্চিত। তবুও বসে থাকলে চলবে না। প্রচার-প্রচারণা তো চালাতেই হবে। ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। দোয়া ও আশির্বাদ চাইছি।

চিতলমারী সদর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস মার্কার মো. সাহেব আলী ফরাজী বলেন, আমি শেরে বাংলা ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভিপি ও উপজেলা যুবলীগের নেতা ছিলাম। আমরা আশাবাদী এখানে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। সাধারণ ভোটারা ঠিকমত ভোট দিতে পারলে আমি নির্বাচিত হব।

বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী মো. মাসুদ সরদার বলেন, অন্য চার ইউনিয়নে দলের একক প্রার্থীদের মত আমরা আরামে ঘুমাতে পারছিনা। রাতের ঘুম ছেড়ে আমাদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটতে হচ্ছে। আল্লাহর রহমতে নির্বাচনে জয়ী হব।

বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস মার্কার ওয়াহিদুজ্জামান পান্না বলেন, স্বতন্ত্র মানে বিদ্রোহী প্রার্থী নয়। আমরা দল করি। ২০১১ সালে বাংলাদেশের কনিষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৪ বছর চেয়ারম্যান ছিলাম। আশাকরি সুষ্ঠ নির্বাচন হবে এবং অবশ্যই বিপুল ভোটে জয় লাভ করব।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আব্দুল মজিদ জানান, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে চিতলমারী সদর, বড়বাড়িয়া ও কলাতলাসহ তিনটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও মেম্বার (সাধারণ ও সংরক্ষিত) পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি শিবপুর, হিজলা, চরবানিয়ারী ও সন্তোষপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী থাকা শুধুমাত্র ইউপি (সাধারণ ও সংরক্ষিত) সদস্য পদে নির্বাচন হবে। এ উপজেলায় মোট ৭টি ইউনিয়নে ৬৩ টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কেন্দ্র। যার বুথ সংখ্যা ৩০২টি। এ উপজেলায় মোট ভোটার এক লাখ নয় হাজার ১৭৭ জন। এদেরমধ্যে ৫৬ হাজার ৭৫ জন পুরুষ, ৫৩ হাজার ১০১ নারী ও তৃতীয় লিংঙ্গের একজন ভোটার রয়েছে।

এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার পরিদর্শক (ওসি) এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশ সজাগ দৃষ্টিতে রয়েছে। কেউ সহিংসতা ছড়াতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে চাইলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লিটন আলী বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য চিঠি এসেছে। সে মোতাবেক আমরা বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করছি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!