বড় মেয়ের জন্মের ৮ বছর পর তাহমিদের জন্ম হয়। খুব যত্নে ওকে লালন পালন করেছি। কাউকে কোনদিন নোখের আঁচড় লাগাতে দেয়নি। সবসময় চোখে চোখে রেখেছি আমার সন্তানকে। অনেক সাধনা করে ওকে পেয়েছিলাম কিন্তু দুর্বৃত্তের অস্ত্রের আঘাতে যে তাহমিদকে মরতে হবে তা কখনও ভাবিনি। ১৯ দিন পার হলেও কেউ তাকে তাহমিদের মতো করে মা বলে ডাকে না। তার কথা চিন্তা করতে করতে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন নিহতের মা সুলতানা আফরোজ। মূল আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
নিহত তাহমিদের মা খুলনা গেজেটকে জানান, দীর্ঘ ২২ বছর ধরে দৌলতপুর পাবলা সাহাপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন। ওই এলাকায় তাদের নিজস্ব বাড়ি ছিল। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বাড়িটি তাদের বিক্রি করতে হয়। এরপর সাহাপাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন তারা। এই এলাকার কোন মানুষ তাদের বাপ বেটার সম্পর্কে কোন খারাপ মন্তব্য করতে পারবে না বলে তিনি জানান।
বড় মেয়ে জন্মের পর একটি ছেলে সন্তানের জন্য অধীর আগ্রহ ছিল তাদের। ৮ বছর পর তাদের ঘরে তাহসিনের জন্ম হয়। লেখাপাড়ার দিক থেকে সে খুব ভাল ছিল। হাতে কাজ ছিল খুবই অসাধারণ। কোন জিনিষ একবার দেখলে সেটি নিমিষে তৈরি করতে পারতো সে। তাকে ছাড়া এ প্রথম একটি ঈদ পার করলাম। কিন্তু কিছুতেই মনের ভেতর থেকে সন্তানের স্মৃতিগুলো সরতে চাইছে না। সবসময় স্মৃতিগুলো বেদনা দেয়।
হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার ছেলে কোনদিন কাউকে কটু কথা বা কাউকে একটি চড়ও পর্যন্ত মারেনি। তাহলে কেন তাকে এভাবে মরতে হল। আমার ছেলেকে বাটালি দিয়ে আঘাত করার সময় রাস্তায় অনেক লোক ছিল। কেউ সেদিন এগিয়ে আসেনি। আঘাত করে পলাশ হাতে বাটালি নিয়ে সকলের সামনে দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে স্থান ত্যাগ করে। সকলে যদি ওকে ধরত তাহলে আজ সে পালিয়ে থাকতে পারত না। পুলিশের ভূমিকায় তিনি বেশ ক্ষুব্ধ। এ মামলা তদন্তে পুলিশ গতি ধীর। প্রশাসন ইচ্ছা করলেই ২৪ ঘন্টার মধ্যে পলাশকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
নিহত তাহমিদের পিতা সৈয়দ তৌহিদুন্নবী বলেন, সন্তানের শোকে স্ত্রী শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন। ঈদের দিন কান্নাকাটি করেছে। মায়ের মন সান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা তার জানা নেই। ১৯ দিন পার হল কিন্তু আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। এটি একটি চিন্তার বিষয়। প্রায়ই থানার অফিসারদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছি। কিন্তু কোন ভাল সংবাদ পায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মিজানুর রহমান বলেন, তদন্তে আমার আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। দু’দিন আগেও পলাশকে গ্রেপ্তারে পাইকগাছা উপজেলার বাকা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখানে তার শ্বশুর বাড়ি। ওই বাড়িতে পলাশের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই সব ঘটনা উন্মোচিত হবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য ৩০ জুন দুপুরে দুর্বৃত্তের বাটালির আঘাতে রায়ের মহল কলেজ ছাত্র সৈয়দ তাহমিদুন্নবী তাহমিদ গুরুতর আহত হয়। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় বাটালি পলাশের সহকারী পিয়ালকে আটক করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়। পরেরদিন দৌলতপুর থানায় তাহমিদের পিতা বাদী হয়ে পলাশ ও পিয়ালের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই