বিএনপির ডাকা সর্বাত্মক অবরোধ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে দেশ অচল হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। রোববার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ভোট ডাকাতদের প্রতিহত করে ১২ কোটি ভোটারের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গণতন্ত্রের পক্ষ শক্তির দরজায় কড়া নাড়ছে বিজয়ের হাতছানি। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে সর্বাত্মক অবরোধে অচল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর ভোট ডাকাত আওয়ামী সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে জনগণের আদালতের কাঠগড়ায় বিচারের মুখোমুখী হওয়ার।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার শুধুমাত্র নিজের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতারের মাধ্যমে গোটা দেশে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জনগণের শান্তিপূর্ণ দুর্বার আন্দোলন ঠেকাতে শেখ হাসিনা নব্য নাৎসি কায়দায় অতীতের মতো আবারো নতুন করে গুমের উৎসব শুরু করেছে। প্রতিটি শহর-বন্দর- জনপদে এখন সাদা পোশাকধারীদের হাড় হিম করা আতংক। চারদিকে ভয়ার্ত পরিবেশ। যেন হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছে বাংলাদেশের বুকে। শেখ হাসিনার গুম বাহিনীর ভয় দেখিয়ে মায়েরা তাদের বাচ্চাদের এখন ঘুম পাড়াচ্ছে। চারিদিকে শুধু জমাট বাঁধা কান্নার পাহাড়।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, প্রতিদিনই সেই কান্নার পাহাড় আরো উঁচু হচ্ছে। ১৫ বছর ধরে সেই কান্নার পাহাড় থেকে এখন দুইয়ে নামছে আর্তনাদ, আর গলগল করে উঠছে ক্রস ফায়ারে মৃতদের আর গুম হওয়া মানুষের অভিশাপ। রাতে-দিনে তারা কালোকাচ ঢাকা মাইক্রোবাসে নিয়ে নাৎসী বাহিনীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে গনতন্ত্রকামীদের। তাদের হাতে সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। র্যাব-পুলিশের নামধারী আওয়ামী পুলিশলীগ আন্দোলনরত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের না পেলে তাদের বাবা-মা, পুত্র-সন্তান, ভাই-বোন এবং আত্মীয় স্বজনদেরও ধরে নিয়ে অদৃশ্য করে রাখছে। তুলে নিয়ে গিয়ে অস্বীকার করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের মতো জিম্মী করে মুক্তিপণ আদায় করছে এই নামধারী আওয়ামী র্যাব-পুলিশ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোথাও কোথাও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের না পেয়ে বাথরুম থেকে পানি এনে বাসার সব বিছানায় ঢেলে দিয়েছে পুলিশ। সারা দেশে দলদাস পুলিশ বাহিনী বিনা মামলায়, বিনা ওয়ারেন্টে বা গায়েবি মামলায় পাইকারী হারে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার করে নির্যাতন করছে। তুলে নিয়ে গিয়ে বন্দী অবস্থায় অনেককে কোমর থেকে পায়ের তালু অবধি হাতুড়িপেটা করে অচল করে দেয়া হচ্ছে। গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। যা চরম মানবতাবিরোধী। যা বাংলাদেশ স্বাক্ষরকৃত জাতিসঙ্ঘের কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার (নির্যাতন বিরোধী কমিটি-কাট) এবং নিপীড়ন বিরোধী আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ইউএটি) অনুযায়ী একটি গণবিরোধী ভয়াবহ অপরাধ, যা আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারযোগ্য এবং কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে ধিকৃত এই ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় রাখতে যারা গণতন্ত্রকামীদের গুম-খুন-গ্রেফতার-মিথ্যা মামলায় জড়িত করছে, তাদেরকে সাবধান এবং হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। আপনারা ভোটের অধিকার আদায়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হবেন না। গণতন্ত্রকামী মানুষের জোয়ার ঠেকাতে পারবেন না। যে সব সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এখন পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে গণতন্ত্রকামীদের হুমকি দিচ্ছেন, সবাইকে গ্রেফতার করা হবে বলে ভয় দেখাচ্ছেন, তারা গণবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসুন। অন্যথায় পুলিশের মর্যাদাপূর্ণ ইউনিফর্মগুলে আওয়ামী লীগে যোগদিয়ে রাজপথে নামুন। দুঃশাসনে পিষ্ঠ প্রতিবাদী মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে দলীয় ও অবৈধ রাষ্ট্রশক্তির হয়ে বেপরোয়া আচরণ করবেন না। আপনারা কে কী করছেন বাংলাদেশের জনগণ সব হিসাব রাখছে। গণঅভ্যুত্থানে আপনাদেরও পরিণতি কী হবে তা জনগণ নির্ধারণ করে রাখছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিনাভোটে ক্ষমতা দখল করে রাখার জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার দেশকে সম্পূর্ণ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে জনসমাজ সমাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। মানুষের আশা জাগানিয়া কিছু নেই। দেশজুড়ে নৈরাজ্যের কালো অমানিশা বিস্তার লাভ করেছে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই শুধু নয়; বর্তমানে পেশাজীবী-শ্রমজীবী-কর্মজীবী এমনকি গার্মেন্টস শ্রমিকরা পর্যন্ত এই ফ্যাসিস্টদের কাছে নিরাপদ নয়। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে আজ পর্যন্ত চারজন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে কেন গাজীপুরে গার্মেন্টসকর্মী আঙ্গুয়ারা-মোঃ জামাল উদ্দিনকে হত্যা করা হলো? গার্মেন্টসকর্মী আয়ারা-মো: জামাল উদ্দিন রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগ চায়নি। আবার শুধুমাত্র স্বামী নিয়ে খেয়ে পরে একটু সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকার দাবি তুলেছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার অবৈধ ক্ষমতার লোভ আগুয়ারা- মো: জামাল উদ্দিনদের বাঁচতে দেয়নি। শেখ হাসিনা সরকার সুকৌশলে দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে।
রিজভী বলেন, এই সরকার পুনরায় চুয়াত্তরের মতো দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে চায়, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করতে চায়। বাংলাদেশী মালিকরা সরকারের প্ররোচনায় শনিবার ১৫০ পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। ন্যায্য দাবি আদায়ের বিক্ষোভের দায়ে ১১ হাজার শ্রমিককে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে দলদাস পুলিশ। পুরো অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। জনগণ বিশ্বাস করে এখন রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসা অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি চান শেখ হাসিনা।
সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ময়মনসিংহ জেলাধীন গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ স্বপন গতকাল ডিবি পুলিশের তাড়া খেয়ে পুকুরে ঝাপ দিলে পুকুরের ভেতরে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আমি এই হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং নিহত স্বপনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।