গুলবদন বেগম ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের মেয়ে এবং সম্রাট হুমায়ূনের বোন। সমরকন্দ আর ফারগানার ক্ষুদ্র রাজত্ব থেকে উচ্ছেদ হয়ে কাবুলে ঘাঁটি গেড়ে দিল্লীতে মুঘল সাম্রাজ্যের ঘটনাবহুল শুরুটা তিনি দেখেছেন খুব কাছ থেকে। ঘোড়ার পিঠেই কেটেছে গুলবদন বেগমের জীবনের একটা বড় অংশ।
ওদিকে, জাহানারা বেগম ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের প্রিয় কন্যা, সম্রাট আওরঙ্গজেবের বোন। মুঘল সাম্রাজ্য তখন সমৃদ্ধির মধ্যগগনে, দরবার মানে তখন রাজনীতি আর ষড়যন্ত্রের ঘনঘটা।
আর জেব-উন-নিসা ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রথম সন্তান এবং চিরবিদ্রোহী। পিতাকে অসন্তুষ্ট করায় জীবনের শেষ বিশ বছর কাটিয়েছেন কারাগারে বন্দি দশায়। মুঘল সাম্রাজ্যেরও ক্ষয়ের কাল শুরু হতে যাচ্ছে অচিরেই।
শেষজন, হাব্বা খাতুন মুঘলদের কেউ ছিলেন না। কাশ্মীরের সাধারণ একটি কৃষক পরিবারের সন্তান, বিয়ের সূত্রে তিনি যুক্ত হয়ে পড়েন রাজ্যটির অভিজাত কূলের সাথে। তার স্বামী কাশ্মীরের শেষ স্বাধীন শাসক ইউসুফ শাহ মুঘলদের হাতে বন্দি হন। ইউসুফ আর কখনো ফিরে আসেননি কাশ্মীরে। শোকাতুর হাব্বা খাতুন বেছে নেন সন্ন্যাসীর জীবন।
এই চারজন নারীর মাঝে স্থান, কাল আর পরিস্থিতির পার্থক্য বিপুল। কিন্তু মিল হলো তারা চারজনই অসামান্য লেখক। হাব্বা খাতুনের কবিতা আজও কাশ্মীরে প্রতিধ্বনি তোলে। জেব-উন-নিসা তার কবিতার জন্য অমরত্ব পেয়েছেন। জাহানারা বেগমের রচনা মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসের বহু উপাদানের উৎস। আর, গুলবদন বেগমের স্মৃতিকথাও একটি ধ্রুপদী গ্রন্থ হিসেবেই বিবেচিত হয়। তাদের সকলের রচনাই অজস্রবার অনুবাদ হয়েছে নানান ভাষায়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সাবিহা হক এই চার নারীর সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেছেন ‘The Mughal Aviary’ বইটি। প্রাক-আধুনিক সময়ের এই অঞ্চলের নারীদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে সাবিহা হকের এই অনন্য গবেষণাগ্রন্থটি সে সময়ের সমাজ, নারী-পুরুষ সম্পর্ক, সুফিবাদ ও ধর্মচিন্তা, রাজনীতি এবং ক্ষমতা কাঠামোর সাথে ব্যক্তির দ্বন্দ্বকে নানান দিক থেকে আলো ফেলে বিশ্লেষণ করেছে।
ইতিমধ্যেই আলোচিত এই গবেষণাগ্রন্থটি লিটারারি এনসাইক্লোপিডিয়া বুক প্রাইজ ২০২৩-এ বিজয়ী হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সাহিত্য সমালোচক ও গবেষকদের জন্য এই স্বীকৃতিটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি কৃতিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়।
‘The Mughal Aviary’ বইটি অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম