২৩ জুলাই মধ্যরাতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় গত দু’দিন খুলনা মহানগরীর পাইকারী মোকামগুলোতে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে সেখানে। আমদানি বেশী হওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে রুপালি ইলিশের। বাজারগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে বিক্রি বেড়েছে ইলিশ মাছের।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য মে মাসের ২০ তারিখ রাত ১২ টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় ইলিশ ধরা। ৬৫ দিন পর ২৩ জুলাই আবারও শুরু হয়। অনুমতি পাওয়ার পর জেলেরা বরিশালসহ গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারে ছুটে গেছেন। জেলেদের জালে বিভিন্ন সাইজের মাছও ধরা পড়ছে। গত দু’দিন খুলনার মোকামগুলোতে মাছের তেমন উপস্থিতি না পাওয়া গেলেও আজ চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ট্রলার থেকে ভ্যানে বা ইজিবাইকে ককসীটে করে মাছ আড়তে আনছেন। জেলেদের জালে মাছ শিকারের পরিমাণ বেশী হওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। সেই সাথে বাজারের ব্যবসায়ীদের মঝে ফিরে এসেছে প্রাণ চাঞ্চল্য।
রূপসা পাইকারী মাছ বাজারে জেলে হারুনার রশীদ তার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। ২৩ জুলাই রাতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে বরিশাল থেকে সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ১৭ টি বোট। সাকালে পৌঁছান তারা। সমুদ্রে জাল ফেলে বিভিন্ন আকৃতির মাছ ধরেছেন তারা। আজও তিনি মোবাইলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। আগামীকাল মাছ বাজারে আসলে তার দাম আরও কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
রূপসা বাজারের পাইকারী মাছ বিক্রেতা আলামিন বলেন, বাজারে আজ ৫ টন ইলিশ মাছ এসেছে। ইলিশের সরবরাহ ব্যাপক হওয়ায় খুচরা মাছ বিক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। গত দু’দিনের তুলনায় ইলিশের আমদানি এ বাজারে ব্যাপক হয়েছে। তিনি বরিশাল, পাথরঘাটা, মহিপুর ও চিটাগাং থেকে মাছ আমদানি করেন। চিটাগাং এর ইলিশ বিক্রি হয় তার আড়তে বেশী। এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বরিশালের ইলিশ। আজ তিনি ৫শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি করেছেন ২৬-২৭ হাজার টাকা, ৬শ- ৮শ’ গ্রাম ওজনের মাছ বিক্রি করেছেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। এক কেজি ওজনের মণ বিক্রি করেছেন ৪৫-৫০ হাজার টাকা। তবে ইলিশের আমদানি বেশী হলে দাম আরও কমতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
একই বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার বলেন, ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞার আগে আমদানি কম ছিল। চাহিদা একটু বেশী ছিল। তখন দামও বেশী ছিল। আজ তিনদিন ধরে এ আড়তে মাছ আসছে। মাছের সরবারাহ বিগত দিনের তুলনায় বেশী দেখছি। ইলিশ আমদানি বেশী হওয়ায় অন্যান্য মাছ বিক্রি কমে গেছে। ক্রেতাদের উপস্থিতি দু’দিন বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমদানি বেশী হলে মাছের দাম আরও কমে যাবে। তবে খুলনার মানুষের কাছে বরিশাল নদীর মাছ বেশ জনপ্রিয়।
খুলনায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, একই অবস্থা। ক্রেতাদের চাপ সামলাতে গিয়ে সেখানকার বিক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছে। কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, দু’দিন ধরে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বিক্রয় পরিদর্শক মো: জাকির হোসেন বলেন, মা মাছ সংরক্ষণের জন্য ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৬৫ দিন পর এখানে কর্মচাঞ্চল্যতা বেড়েছে। প্রথমদিনে কম হলেও আজ দু’দিন সরবরাহের পরিমাণ বেড়েছে ব্যাপক। কমতে শুরু করেছে ইলিশের দাম। ব্যবাসায়ীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন সমুদ্রে ব্যাপক পরিমাণ মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। মাছের আমদানি বেশী হলে ইলিশের দাম কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
খুলনা গেজেট / আ হ আ