‘গেলে আসেন, না গেলে সরেন’। শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় নগরীর সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের চিত্র। ঝিনাইদহ যাবেন বলে বটিয়াঘাটা উপজেলা থেকে এসেছিলেন রিপা বেগম। সঙ্গে ছিল তার পাঁচ বছর বয়সী একটি সন্তান। তিনি জানতেন না যে তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার।
মূল্য বৃদ্ধির কারণে খুলনা থেকে বিভিন্ন রুটে সীমিত আকারে ছাড়ছে গণপরিবহন। অনেক পরিবহন মালিক অঘোষিত ভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। যা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ভাড়া বেশী চাওয়ায় অনেক যাত্রী নির্ধারিত গন্তব্যে না গিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ৮০ টাকার ডিজেল ১১৪ টাকা, ৮৬ টাকার পেট্রোল ১৩০ টাকা ও ৮৯ টাকার অকটেন ১৩৫ টাকায় বিক্রি করছেন পাম্প মালিকরা। রাত ১০ টার দিকে ঘোষণা দেওয়ার পর শুরু হয় হুলস্থুল কান্ড।
রিপা বেগম জানান, রোববার বাবার অসুস্থতার খবর জেনে শ্বশুর বাড়ি হতে নিজ গ্রামে আসেন। ভাড়া বাড়ানো হয়েছে সেটি তিনি জানতেন না। যেদিন ঝিনাইদহ থেকে খুলনায় এসেছিলেন সেদিন তাকে টিকিট বাবদ ১৮০ টাকা দিতে হয়েছিল। কিন্তু যাবার সময় আজ তাকে ২৫০ টাকা গুনতে হবে। এটা শুনে তিনি রিতিমতো অবাক হয়েছেন।
জানতে চাইলে গড়াই পরিবহনের কাউন্টার থেকে বলা হয় এক লিটার তেলে ৩৪ টাকা বেড়েছে। কিন্তু সরকার কোন ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়নি। তাহলে এখান থেকে কেন এত বেশী নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি ওই কাউন্টারের টিকিট মাষ্টার। তিনি বলেন, তেলের দাম বেড়েছে তাই পরিবহন ভাড়া বেড়েছে।
অপরদিকে সোনাডাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সুন্দরবন পরিবহনের লাইনম্যান সুুজিত জানান, ঢাকা যেতে ও আসতে তার ১২০ লিটার তেলের প্রয়োজন হয়। ৪ হাজার টাকার বেশী তেল প্রয়োজন হবে। গাড়ী ভাড়া জানতে চাইলে তিনি প্রথমে ৬৫০ টাকার কথা বলেন। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কথা ঘুরিয়ে ৫০০ টাকার কথা বলেন।
খুলনা থেকে পাইকগাছা রুটের ভাড়া ১০০ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়াই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমনিতো করোনা ভাইরাসের লকডাউনের প্রকোপ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি অনেকেই। এরই মধ্যে তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা সরকারের অনৈতিক সিদ্ধান্ত।
গ্রীনলাইন পরিবহন কর্মকর্তা এম এ খায়ের বলেন, গত রাত থেকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা থেকে এখনও তাদের ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আজকের মধ্যে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সোহাগ পরিববহন কাউন্টার টিকিট মাষ্টার বলেন, এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আগের ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে সকাল থেকে কয়েকটি গাড়ি খুলনা থেকে ছেড়ে গেছে।
টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের জিএম গোলাম ছামদানি সাকিব বলেন, সড়ক বিভাগ থেকে ভাড়ার ব্যাপারে কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আজকের জন্য এসি ও নন এসি পরিবহনে প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে আসন বাবদ ১০০ টাকা বেশী নেওয়া হচ্ছে। খুলনাবাদে অন্য রুটের ভাড়া আসন প্রতি ৫০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া পরিবহনের যাত্রী হামিদ বলেন, দাম বাড়ার ঘোষণা দিলে বেড়ে যায় সব জিনিষের দাম। কিন্তু দাম কমানোর ঘোষণা দিলে তা কার্যকর হতে সময় লাগে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘ভোজ্য তেলে ১৪ টাকা কম হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকার ২ সপ্তাহ আগে কিন্তু এখনও তা আগের দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ রাত ১০ টার দিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণার সাথে তা কার্যকর হয়ে গেলে। এটি আমাদের দেশ।’
ইমাদ পরিবহনের যাত্রী হারুন বলেন, কোন কিছুর নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। প্রতিবেশী দেশ ভারতে তেলের দাম বেশী। আর আমাদের দেশে কম। তাই পাচারের কথা বলে তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এটার কোন যৌক্তিকতা নেই। তিনি তেলের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই