স্বাস্থ্য সহকারীদের গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন-বৈষম্য নিরসনের দাবিতে চলমান কর্মবিরতির কারণে খুলনায় টিকাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য শনিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রথম দিনে জেলায় প্রায় ১৪ হাজার শিশু হাম-রুবেলা টিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
২৬ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহবানে খুলনার নয়টি উপজেলার স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারীরা টিকাদানসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ইপিআই ও হাম-রুবেলা টিকাদানের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন তাঁরা। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁরা কর্মক্ষেত্রে এই কর্মবিরতি পালন করে আসছেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে টিকাদান কর্মসূচি চলছে। জেলায় এ বছর ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭৫ জন শিশুকে টিকাদানের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন সুজাত আহম্মেদ খুলনা গেজেটকে বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মবিরতির জন্য জেলার ১৩ হাজার ৯১১ জন শিশু সব ধরনের টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। টিকাদানের কর্মসূচি ১২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মবিরতিতে থাকায় এ কর্মসূচির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন সূত্রে জানা যায়, ৩ ডিসেম্বর থেকে জেলার নির্ধারিত কেন্দ্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের একযোগে ইপিআই ও হাম-রুবেলা টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে ২৬ নভেম্বর থেকে স্বাস্থ্য সহকারীদের গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন-বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ইপিআই ও হাম-রুবেলা টিকাদানের সব কার্যক্রম বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি পালন করতে দেখা গেছে। কর্মবিরতিতে জেলার স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা মিলিয়ে প্রায় ৪৩ জন অংশ নেন। তাঁদের কেউ ২৬ নভেম্বর থেকে ইপিআই ও হাম-রুবেলা টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নেননি।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ১৭ দিনের টানা কর্মবিরতির কারণে শিশুরা বিসিজি, পেন্টা ১ম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়, পিসিভি ১ম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়, ওপিডি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, এফআইপিভি প্রথম ও দ্বিতীয় এবং এমআর প্রথম ও দ্বিতীয় টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন খুলনা জেলা শাখার সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, ২০১৮ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ও চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর লিখিত প্রতিশ্রুতি অনুসারে স্বাস্থ্য পরিদর্শককে ১১তম গ্রেড, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শককে ১২তম গ্রেড এবং স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৩তম গ্রেড দিয়ে নিয়োগবিধি সংশোধনসহ বেতন-বৈষম্য নিরসন করতে হবে, নয়তো এই কর্মবিরতির কর্মসূচি চলবে।
খুলনা গেজেট / এআর