খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

খুলনায় ৮৫ লাখ টাকা প্রতারণার শিকার হয়ে বিপাকে ব্যবসায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কম্পিউটার সামগ্রী কেনার জন্য ৮৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে বিপাকে পড়েছেন খুলনা নগরীর জলিল টাওয়ারের কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী তাকে ওই টাকার সামগ্রী প্রদান করেনি এমএস সল্যুশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাকে অল্প কিছু সামগ্রী প্রদান করে ওই প্রতিষ্ঠানটি। যা নিম্নমানের ও কারিগরি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ‘র কারিগরি কমিটি যাচাই-বাছাই করে তা গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় জিয়াউর রহমান আদালতে মামলা দায়েরের পর আদালত থেকে বিবাদীকে সমন জারি করা হয়েছে।

প্রতারণার শিকার হয়ে নগরীর জলিল টাওয়ারের এম এ কম্পিউটারের মালিক জিয়াউর রহমান গত ২২ অক্টোবর অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন। মামলায় নগরীর ৮২, বাগমারা মেইন রোডের এম এম সল্যুশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদীপ্ত বাইন সাগরকে বিবাদী বা আসামি করেন। আদালত বাদীর আরজি গ্রহণ করে আসামির প্রতি সমন জারি এবং আগামী ২২ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

বাদীর আরজিতে বলা হয়, তিনি গত ২৫ এপ্রিল দরপত্রের মাধ্যমে ‘খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে কম্পিউটার সামগ্রী, বৈজ্ঞানিক ও ল্যাব যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজ পান। ওই সামগ্রী সরবরাহের জন্য তিনি গত ১২ মে সুদীপ্ত বাইনের সঙ্গে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তিপত্র করেন। চুক্তিপত্রে ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে সকল সামগ্রী সরবরাহ এবং সেগুলোর ওয়ারেন্টি ও গুণগত মান বিবাদী নিশ্চিত করবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।

এরপর বাদী জিয়াউর রহমান ২ দফায় সুদীপ্ত বাইনকে মোট ৮৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা সামগ্রী সরবরাহে সুদীপ্ত বাইন বিলম্ব করায় বাদী নিজে অন্য জায়গা থেকে ১০ লাখ টাকার সামগ্রী ক্রয় করে কুয়েটে সরবরাহ করেন। পরবর্তীতে সুদীপ্ত বাইন জিয়াউর রহমানকে কিছু সামগ্রী প্রদান করলে তিনি তা কুয়েটে সরবরাহ করেন। কিন্তু সুদীপ্ত বাইনের সরবরাহ করা ওই সামগ্রী ত্রুটিপূর্ণ ও চুক্তি বহির্ভূত হওয়ায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর কুয়েট কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করে ফেরত পাঠায়।

বাদী জিয়াউর রহমান বলেন, আমি দুটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সুদীপ্ত বাইনকে টাকা দিয়েছিলাম। এখন ব্যাংক ঋণের বিপরীতে প্রতিদিন ৮ হাজার ১২০ টাকা সুদ গুণতে হচ্ছে। বিষয়টি বারবার সুদীপ্ত বাইনকে বলার পরও তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় গত ২ অক্টোবর আমি আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। গত ৮ অক্টোবর তিনি তা গ্রহণ করলেও কোনো জবাব দেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সুদীপ্ত বাইন তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সল্যুশনের মাধ্যমে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে সুদীপ্ত বাইন সাগরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ১২ ই মে ২০২৪ ইং তারিখে এম এ কম্পিউটারের সাথে তিন শত টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে কুয়েটে মালামাল সরবরাহে রেফারেন্স নং IND041SBS2402.02.R03 (এস এস সল্যুশনের অফিসিয়াল প্যাডের মাধ্যমে এস এস সল্যুশনের একটি দরপত্র, এম এ কম্পিউটারের সাথে কুয়েটের সাক্ষরিত দরপত্রের সাথে সম্পূর্ণ সদৃশ্য পূর্ণ নয়)। এম এ কম্পিউটারের মালিক জিয়াউর রহমান কুয়েটের সাথে রেফারেন্স নং KUET/EIAA/2023-2024/DG-2308/EEE এর অনুসারে কুয়েট কর্তৃক প্রদত্ত দরপত্র মোতাবেক দরপত্র সাক্ষর করেন। এমএ কম্পিউটারের মালিক জিয়াউর রহমান রেফারেন্স নম্বর KUET/EIAA/2023-2024/DG-2304/EEE অনুযায়ী, যা KUET দ্বারা MA কম্পিউটারকে দেওয়া হয়েছিল, কিছু বৈদ্যুতিক এবং কম্পিউটার সম্পর্কিত পণ্য সরবরাহ করার জন্য একটি প্রযুক্তিগত দরপত্র সরবরাহ করেছিল। ১২ ই মে ২০২৪ তারিখে এসএস সলিউশন এবং এমএ কম্পিউটার রেফারেন্স নম্বর IND041SBS2402.02.R03 এ সমস্ত অসঙ্গতি এড়িয়ে উপকরণ সরবরাহ করার জন্য একটি তিনশত টাকার স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করেছে। এমএ কম্পিউটারের মালিক জিয়াউর রহমানকে এসএস সলিউশনের দেওয়া অফার অনুযায়ী তিনি তা অনুমোদন করেন এবং ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু মূল সমস্যাটি ছিল কুয়েটের দরপত্রে প্রযুক্তিগত সরবরাহ করা এসএস সলিউশনের প্রস্তাবিত প্রযুক্তিগত এবং মূল্যের সময়সূচীর সাথে এক ছিল না। প্রথম পক্ষের এমএ কম্পিউটার ওয়ার্ক অর্ডার সক্রিয় করার জন্য দ্বিতীয় পক্ষের এসএস সলিউশনকে পঁয়ষট্টি লাখ টাকা অগ্রিম অর্থ প্রদান করে। তৃতীয় শর্ত অনুসারে বাকি পরিমাণ পরিদর্শন শেষে সমস্ত পণ্য সরবরাহের আগে পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু এম এ কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী জিয়াউর রহমান তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। ১২ জুন ২০২৪ তারিখে ২০ লাখ টাকার একটি ছোট অর্থ প্রদানে রাজি হন, কিন্তু উপকরণ সরবরাহ করার আগে বাকি টাকা দিতে রাজি হননি যা চুক্তির লঙ্ঘন ছিল। মোট ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সফল সমাপ্তির আগে পঁচানব্বই শতাংশ উপকরণ বিতরণ করা হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমান চুক্তির তৃতীয় শর্ত লঙ্ঘন করে কোনো অর্থ প্রদানে রাজি হননি। একই সময়ে এমএ কম্পিউটার রেফারেন্স নম্বর IND041SBS2405.05.R02 অনুযায়ী KUET ওয়ার্ক অর্ডারের অধীনে একটি দ্বিতীয় কার্যাদেশ দেয় যা 886598 এর টেন্ডার নম্বর অনুসারে এমএ কম্পিউটার দ্বারা অর্জন করা হচ্ছিল। চার লাখ আশি হাজার টাকা, যা সফলভাবে কুয়েটে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সেই টাকা পাওয়ার পরও জিয়াউর রহমান টাকা দিতে রাজি হননি। যেখানে রেফারেন্স নম্বর IND041SBS2402.02.R03 অনুযায়ী সম্পূর্ণ ওয়ারেন্টিসহ বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পঁয়তাল্লিশ শতাংশ পণ্যের কিছু অসঙ্গতি ছিল। এমনকি তার মধ্যে কিছু উপকরণ বাজারে নেই এবং কিছু পণ্যের ব্যয় বেশি যা দরপত্রের সময়সূচির মূল্যের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ছিল, যা জিয়াউর রহমান কুয়েট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ক্লিয়ার করেননি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!