কেশবপুরে করোনাকালীন ৬ মাসে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। তারপরও অপরাধ প্রবণতা ও বাল্যবিবাহ দমন করা যাচ্ছে না।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইরুফা সুলতানা উপজেলাব্যাপী বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ৯৫টি মোবাইল কোর্টের ৩২৯টি মামলায় ৭ লক্ষ ১ হাজার ৯ শত টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। এর মধ্যে গত মার্চ মাসে ৩০টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪৬টি মামলায় ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। এছাড়াও এপ্রিল মাসে ২৪টি মোবাইল কোর্টে ৭৭টি মামলায় ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা, মে মাসে ৫টি মোবাইল কোর্টে ২২টি মামলায় ১৬ হাজার ৯ শত টাকা, জুন মাসে ১৮টি মোবাইল কোর্টে ১৩২টি মামলায় ১ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা, জুলাই মাসে ৬টি মোবাইল কোর্টে ১৩টি মামলায় ২৩ হাজার টাকা, আগষ্ট মাসে ৫টি মোবাইল কোর্টে ২৬টি মামলায় ৩২ হাজার টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৭টি মোবাইল কোর্টে ১৩ টি মামলায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন।
এর মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন ২০০৯, দন্ডবিধি ১৮০৭, সড়ক আইন ২০০৮ সহ বালি উত্তোলন, করোনাকালীন বিভিন্ন সময় পথচারীদের মাস্ক ব্যবহার না করার দায়ে জরিমানা আদায় করেছেন। এছাড়াও বাল্যবিবাহের কারণে জুন এবং জুলাই মাসে ৬টি মামলায় ৫২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। এরমধ্যে ২৬ জুন বাল্যবিবাহের আইন ২০১৭ প্রয়োগ করে সাতক্ষীরা পাটকেলঘাটা গ্রামের আনছার আলীর পুত্র নুরুজ্জামানকে ৫ হাজার টাকা, কেশবপুর ভেরচি গ্রামের রতন মোল্যার পুত্র আব্দুল হালিমকে ১০ হাজার টাকা, দত্তনগর গ্রামের রাবক্স সরদারের পুত্র শহিদুল ইসলামকে ২ হাজার, বেগমপুর গ্রামের তবিবর গাজীর কন্যা শরীফা খাতুনকে ২০ হাজার টাকা, বুড়িহাটি গ্রামের শফিকুল ইসলামের কন্যা শাপলা খাতুনকে ৫ হাজার টাকা ও খুলনা মহনগর দোলখোলা রোডের শমীনুদ্দিন শেখের পুত্র মকবুল হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়াও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান বিভিন্ন সময় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইন প্রয়োগে ৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়ে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন।
বাল্যবিবাহের অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান ও জরিমানা আদায়ের পরও কেশবপুরে বাল্যবিবাহ থেমে নেই। করোনাকালীন যুবক যুবতীরা বেকার কর্মহীন হয়ে সময় কাটানোর কালে উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে পাইকারি হারে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেড়ে যায়। সর্বশেষ গত ১১ অক্টোবর পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সোহরাব হোসেনের কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌসকে রাজনগর বাঁকাবর্শি গ্রামের মতিয়ার রহমান মোড়লের পুত্র রোকনুজ্জামান রনি বাল্যবিবাহের আইনকে উপেক্ষা করে বাল্যবিবাহ করেছেন।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইরুফা সুলতানার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাকালীন জনসাধারণের ভিতরে অপরাধ প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে আইন প্রয়োগ করে দন্ড ও জরিমানা আদায় করেও অপরাধ প্রবণতা দমানো যাচ্ছে না। এছাড়াও আইন প্রয়োগ করে বাল্যবিবাহ কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ পাঁজিয়ায় বাল্যবিবাহের খবরটি যখন আমি জানতে পারি ওই সময় ঢাকায় অবস্থান করার কারণে আমি আদালত পরিচালনা করতে পারিনি। তবে আমাদের দেশে অপরাধ প্রবণতা ও বাল্যবিবাহ দমন করতে হলে প্রথমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা খুবই প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খুলনা গেজেট/কেএম