খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৫ মে, ২০২৪

Breaking News

  আজ খুলছে সব স্কুল-কলেজ
  রাতভর জ্বলছে সুন্দরবন, দেড় কি.মি. এলাকাজুড়ে আগুন

কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় আসামি খালাস, হতাশ ভিকটিমের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় আলোচিত ‘মা’ ডেকে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনাটির মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ওই রায়ে খালাস পেয়েছেন মামলার একমাত্র আসামি এনামুল হক ওরফে টিটো। রায় ঘোষণার পর ওই কলেজছাত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে প্রচন্ড ভেঙে পড়েছেন। বুধবার দুপুরে ওই রায় ঘোষণা করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৩ এ মামলাটি বিচারাধীন ছিল।

ওই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন বিএম আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, বুধবার ছিল মামলার আর্গুমেন্টের (যুক্তিতর্ক উপস্থাপন) দিন। ওই সময় মামলার নথি তুলে দেখা যায়, ওই মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসারসহ গুরুত্বপূর্ণ তিনজনের স্বাক্ষ্য বাকি রয়েছে। এ কারণে আর্গুমেন্টের দিন ওই তিনজনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে করা ওই আবেদন বিচারক পরে শুনানি করবেন বলে জানান। কিন্তু বেলা আড়াইটার দিকে হঠাৎ করে বাদীপক্ষের কাছ থেকে শুনতে পান ওই মামলার রায় হয়ে গেছে। বিচারক আসামিকে খালাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘কীভাবে এমন একটি চাঞ্চল্যকর মামলার রায় হঠাৎ করে ঘোষণা করা হলো তা বুঝতে পারছি না। প্রায় সব স্বাক্ষীই বাদীপক্ষের অনুকূলে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার অভিযোগপত্রেও আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। মামলাটি নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।’

ওই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আর্গুমেন্টের দিন ছিল। বাদীর আইনজীবী তিনজনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করার জন্য আবেদন করেছিলেন। মনে হয়, ওই আবেদন খারিজ করে বিচারক মামলার রায় ঘোষণা করেছেন।’

ধর্ষণের ওই মামলাটির পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিল বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। ওই প্রতিষ্ঠানের খুলনার সমন্বয়কারী অশোক কুমার সাহা বলেন, আর্গুমেন্টের দিন হিসেবে যথারীতি পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন তাঁরা। বাদীপক্ষের আইনজীবী আবেদন করার পর বিচারক সময় চাইলে তাঁরা আদালত থেকে চলে আসেন। পরে শুনতে পান মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ওই খবর শুনে তাঁরা অবাক হয়েছেন। যেহেতু ব্লাস্ট শুরু থেকে ওই মামলাটির আইনগত সহায়তা দিচ্ছিল তাই মামলাটির কপি তুলে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তাঁরা।

ওই মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, বিচারক স্বাক্ষী ও মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে রায় ঘোষণা করেছেন। আগের দিন আসামিপক্ষের আর্গুমেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওইদিন বাদীপক্ষের আর্গুমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা আর্গুমেন্ট না করে স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন করেন।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি কলেজ থেকে ইজিবাইকে চড়ে বাসায় ফেরার পথে এনামুল হক টিটোর সঙ্গে পরিচয় হয় মেয়েটির। প্রথম পরিচয়েই এনামুল তাঁকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন। কিছুদিন আগে তাঁর মা মারা গেছেন এ কারণে মেয়েটিকে তিনি (এনামুল) মা বলে ডাকার অনুমতি চান। এনামুল বয়স্ক মানুষ হওয়ায় বিষয়টি মেনে নেন ওই কলেজছাত্রী। এরপর কলেজে যাওয়া-আসার পথে দেখা হলেই খাতির করতেন এনামুল। ১৯ জানুয়ারি তিনি মেয়েটিকে বাড়ির সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি ছয়তলা বিশিষ্ট বাসার ষষ্ঠ তলায় নিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়। লজ্জা ও আতঙ্কে এ ঘটনা প্রথমে কাউকে বলেননি কলেজছাত্রী। ওই ঘটনায় আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন মেয়েটি। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে পরিবারকে ঘটনাটি জানিয়ে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন। প্রায় দুই মাস পর ওই বছরের ১৫ মার্চ কেএমপির সোনাডাঙ্গা থানায় ধর্ষণের মামলা করেন মেয়েটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই কলেজছাত্রীর মা বলেন, ‘আসামিপক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার টাকা দিয়ে মামলাটি মিমাংসা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম আসামির সাজা হোক। এ কারণেই আইনিভাবে মামলাটি এতোদিন লড়ে এসেছি। কিন্তু কিভাবে যে রায় ঘোষণা করা হলো তা বুঝতে পারছি না। আদালতে থাকার পরও কিছুই জানতে পারিনি। আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, মামলার নতুন তারিখ দেওয়ার কথা ছিল। পরে সেটি আনতে গিয়ে শুনি রায় ঘোষণা করা হয়ে গেছে, আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর তাঁর মেয়ে মানসিকভাবে প্রচন্ড মুষড়ে পড়েছেন। তাঁরাও মানসিকভাবে ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছেন না।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!