খুলনার বহুল আলোচিত মডার্ণ সী ফুডের কর্মকর্তা উজ্জল কুমার সাহা হত্যার দায়ে মালিকের ছেলে মেহেদী হাসান ষ্টারলিংসহ পাচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে এ মামলার অন্য চার আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত।
সোমবার খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ শহীদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, মেহেদী হাসান ষ্টারলিং, মোঃ আরিফুল হক সজল, নাহিদ রেজা রানা ওরফে রানা ওরফে লেজার রানা, মোঃ ডালিম শিকদার ওরফে আমির শিকদার ডালিম ও সজল মোল্লা।
সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামি জামিনে ছিল। রায় ঘোষণার পর সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ৭ জুন সাড়ে ১০ টার দিকে মেয়েকে নিয়ে সামছুর রহমান রোডে জোহরা খাতুন স্কুলে আসেন উজ্জল কুসার সাহা। এরপর পাশের দোকানে গিয়ে ধুমপান করতে থাকেন তিনি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ফোন দেয় মেহেদী হাসান ষ্টারলিংয়ের খালাতো ভাই আরিফুল হক সজল । অবস্থান নিশ্চিত করে অন্যান্য আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছায় সজল। আসামিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করে উজ্জলের সাথে। সজল স্থান ত্যাগ করার সাথে সাথে অন্যান্য আসামিরা ভিকটিমের ওপর ক্রিকেট খেলার ষ্ট্যাম্প ও ইট নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ শুরু করে। তাদের আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আসামিরা উজ্জলকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে খুলনা জেনারেল ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে নিহতের ছোট ভাই সুমন কুমার সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে খুলনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন খুলনা থানার এসআই সোহেল রানা। আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। কিন্তু চার্জশিট থেকে মামলার মূল পরিকল্পনাকারীর নাম বাদ দেওয়ায় বাদী আদালতে নারাজি পিটিশন করেন। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহাজাহানের নিকট দেওয়া হয়। তিনিও আগের তদন্ত কর্মকর্তার পথ অনুসরণ করায় মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের নিকট পাঠানো হয়। পরে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সুপার হেড কোয়ার্টারস মোঃ আমিনুল ইসলাম ৯ জন আমামির নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
উজ্জলকে যে কারণে হত্যা করা হয়
মেহেদী হাসান ষ্টারলিং মডার্ণ সী ফুডের মালিকের ছেলে। সে কারণে উজ্জল কুমার সাহার সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল। ষ্টারলিং নেশাগ্রস্থ ও চারিত্রিক ত্রুটির কারণে পিতা তাকে প্রায়ই বকাঝকা করতেন। এ কারণে সে উজ্জলকে সন্দেহ করতো। উজ্জলকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে সে। প্রথমে তাকে অপবাদ দিয়ে চাকরীচ্যুত করা হয়। তারপরও থেমে থাকেনি স্টরলিংয়ের পরিকল্পনা।
যেভাবে হত্যা করা হয়
উজ্জলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ভাড়া করা হয় খুনীদের। খুনীরা উজ্জলকে চিনতে না পারায় ব্যবহার করা হয় স্টরলিংয়ের খালাতো ভাই আরিফুল হক সজলকে। পরিকল্পনা অনুযায়ি ঘটনার দিন সজল ফোন দিয়ে উজ্জলের অবস্থান নিশ্চিত করে। আসামিদের চিনিয়ে দেওয়ার জন্য সজল নিহতের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর সজল স্থান ত্যাগ করলে মামলার অন্যান্য আসামিরা ইট ও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করতে থাকে। এ সময় উজ্জল ফোন দেয় সজলকে। সজল আবার নিহতের ছোট ভাইকে ফোন দিয়ে বলে তোমার ভাইকে কে বা কারা মারছে। এর আগে স্থানীয়রা উজ্জলের ফোন দিয়ে সজলকে ফোন দেয়। সজল নিশ্চিত হয়ে ফোন কেটে দেয়। প্রথমে তাকে খুলনা জেনরেল ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে উজ্জল ছোট ভাই সুমনকে সব ঘটনা খুলে বলে যায়। ভয়ের কারণে মামলায় আসামিদের নাম উল্লেখ করতে পারেনি তিনি।
খুলনা গেজেট/এএ