খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

আম্পানের এক বছরেও ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি কয়রাবাসী

নিতিশ সানা, কয়রা

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবের এক বছর পূর্তি বৃহস্পতিবার। অথচ এ প্রলয়ঙ্করি ঝড়ের শিকার অনেক এলাকার মানুষ আজো সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেই ক্ষতি। জনপদে চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও সুপেয় পানির তীব্র হাহাকার। নিজের কিংবা সব হারিয়ে অন্যের জমিতে কোন রকমে মাথা গোঁজার মত ঘর বেধে বাস করছে অনেকেই। নদী ভাঙ্গন সংস্কার করা হলেও কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধ এখনও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি এলাকাবাসীর।

গত বছর ২০ মে আম্পানের তান্ডবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার ৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর, উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মহারাজপুর ইউনিয়ন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ মে আম্পানের তান্ডবে দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল। আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল ৩৮ হাজার, ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, ৪ হাজার হেক্টর মৎস্য ঘের ডুবে গিয়েছিল। এর ভেতর ৭০ পরিবারকে সরকারি ভাবে ঘর দেওয়া হয়েছে।

আম্পানের রাতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি মৎস্য ঘের বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। আম্পানের তান্ডবে সর্বস্ব হারিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর ঝুঁপড়ি বেঁধে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ।

এখন বেড়িবাঁধ হয়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি সর্বহারা উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। যাদের মাথা গোজার মত ঠাঁই রয়েছে তারা নতুন করে ঘর বেধে স্বপ্ন দেখছেন বসবাস করার। তবে অনেকেই এখনো রাস্তার পাশে ঝুঁপড়িতে রয়েছেন। এসব ইউনিয়নের সাথে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। আম্পানের এক বছরে আজও মেরামত করা হয়নি অধিকাংশ রাস্তা, জরাজীর্ণ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে না পারায় হাটতে হয় মানুষকে। কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। বিশেষ করে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত বাঁধ রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন। এছাড়া পূর্ব মঠবাড়ি লঞ্চ ঘাট হতে পবনার ক্লোজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকার মনিরুজ্জামান মুকুলের স্ত্রী বলেন, ৫টি ছাগল, ১৫/১৬টি হাঁস ও ১০টি মুরগী ছিল। ঝড়ের রাতে আমরা পাশের একজনের বাড়িতে ছিলাম। পরে এসে দেখি শুধু পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই। সব নদীর পানিতে ভেসে গেছে। পরে রাস্তার পাশে সরকারী জমিতে কোন রকমে একটি ঘর বেধে থাকছি। সব সময় আতংকে থাকি। এর আগে চারবার ভেঙ্গে আমাদের সব জমি নদীতে চলে গেছে। তিনি আরও বলেন, এক বছরে সরকারী কোন সহায়তা পাইনি। ৩০ কেজি কার্ডের জন্য অনেক হাত পা ধরার পরেও হয়নি। শুধু একটি এনজিও থেকে ৩ হাজার টাকা পেয়েছি।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালি গ্রামের মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রায় সবটুকু জমি বছরে বছরে কপোতাক্ষের ভাঙ্গনে নদীতে চলে গেছে। যেটুকু ছিলো সেখানে কোন রকমে ঘর বেধে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। আম্পান ঝড়ের রাতে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে গেছিলাম। সকালে ফিরে এসে দেখি আমাদের ঘর বাড়ি নেই। বাঁধ ভেঙ্গে বাড়ির উপর দিয়ে খাল চলে গেছে। পরে বাঁধ হলেও আমার ঘর বাঁধার জায়গা নেই। এখন পরের জায়গায় ঝুঁপড়ি বেধে বসবাস করছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, আম্পানে বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি বর্ষা মৌসুমের আগে বাঁধ মেরামত হয়ে যাবে। আম্পানে বিধ্বস্ত পরিবারগুলোকে সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাছাড়া ৭০ পরিবারকে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!