সম্মিলিতভাবে ইসরায়েলকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করছি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সরাসরি ইসরায়েলের বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। যখনই আমাদের প্রয়োজন হবে, সুযোগ হবে, আমাদের যা কিছু আছে সব নিয়ে ইসরায়েলের বিপক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
শুক্রবার (১০ মে) জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত অব্যাহত ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে নামাজের পর স্লোগানে স্লোগানে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণ মুখর করে তোলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘের জবাব চাই’। সমাবেশ চলাকালে তারা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে নাড়তে থাকেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম বলেন, কেউ দেখবেন ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলে, ফিলিস্তিনের বিপক্ষে কথা বলে। অথচ পাসপোর্টের মধ্যে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ লিখিত ছিল, সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কত মায়া কান্না করে। বলা হচ্ছে, জমি তোমার, আর লিখে দেওয়া হয়েছে অন্যজনের নামে। এর চেয়ে বড় মুনাফিক আর কেউ হতে পারে না। পাসপোর্টে লেখা ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসরায়েলের কোনো দূতাবাস এ দেশে থাকবে না। সেই পাসপোর্ট থেকে যখন একসেপ্ট ইসরায়েল তুলে দেওয়া হয়, তার মানেটা কী? মানে হচ্ছে, তলে তলে তাদের সঙ্গে পুরোপুরি সব সেট হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি যদি ইসরায়েলের বিপক্ষে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকেন তাহলে বলতে চাই, তাহলে আপনি ইসরায়েলের বিপক্ষে একদল সৈন্য বাহিনী গঠন করুন।
ফজলুল করিম দাবি জানিয়ে বলেন, ইসরায়েলি পণ্য বয়কট নয়, বাংলাদেশে ইসরায়েলের কোনো পণ্য ঢুকতে দেওয়া হবে না। এটি আইন করে নিষেধ করতে হবে। তাহলেই আমরা বুঝব আপনি ইসরায়েলের বিপক্ষে।
তিনি বলেন, রমজানের সময় ইসরায়েলের বিমান বাংলাদেশের এয়ারপোর্টের নামল কীভাবে, এর জবাব বাংলাদেশের জনগণ চায়। গোটা দুনিয়ার মানবতার মানুষরা চায়। আপনি ইসরায়েলের বিপক্ষে তাহলে ইসরায়েলের বিমান আপনার অনুমতি ব্যতীত কীভাবে এ দেশের বিমানবন্দরে নামে? তার মানে হলো তলে তলে সব হয়ে গেছে।
ভারতকে উদ্দেশ করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, আজ বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ও মুসলমানকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র চলছে। আজ এই ভূখণ্ডকে বিক্রি করার ষড়যন্ত্র চলছে। আজ বন্ধু বলে যাদের আপন করতে চাই, তারা আমাদের বুকের ওপর বারবার গুলি করবে, আমাদের ভূখণ্ড দখল করার ষড়যন্ত্র করবে, এ দেশের ইসলামকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করবে, এ দেশের মানুষকে গোলাম বানাবার চক্রান্ত করবে, এ দেশের মানুষ তা মানতে পারে না। কাজেই শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়, যে ভারত ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছে, ইসরায়েলের পক্ষে তারা দাবি তুলেছে, সেই ভারতকে বাংলাদেশের মানুষ বয়কট করে তাদের আপন করতে পারে না।
কর্মসূচি ঘোষণা করে ফজলুল করিম বলেন, একই দাবিতে শুক্রবার দেশের সব উপজেলা, জেলা ও মহানগরীতে মিছিল করা হবে। এ ছাড়া ফরিদপুরে যেসব শ্রমিক ভাইয়েরা হত্যার স্বীকার হয়েছে, আজও সেই খুনিদের অ্যারেস্ট করতে সরকার পারেনি, ব্যর্থ হয়েছে। যদি সরকার তালবাহানা করে তবে ইনশাআল্লাহ ফরিদপুরে বিশাল জনসভার ঘোষণা দেব। পুরো দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ একত্রিত হয়ে আমরা এই খুনিদের বিপক্ষে আন্দোলন করব।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে দলের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় হয়ে নাইটেঙ্গেল মোড় প্রদক্ষিণ করেন।
খুলনা গেজেট/এএজে