খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

অভয়নগরে সড়কের কাজে অগ্রগতি নেই, যানবাহন ও পথচারীদের চরম দুর্ভোগ

শাহিন আহমেদ, অভয়নগর

অভয়নগরে শংকরপাশা ফেরিঘাট থেকে সিংগেড়ী সড়কের কাজের কোন অগ্রগতি নেই। যানবহন ও পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দিনের পর দিন। খানাখন্দে ভরা ওই সড়কে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ব্যস্ত এই সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

জয়নাল হোসেন বলেন, আমার বউকে গত বুধবারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে রাস্তা বেহাল থাকায় ভ্যান থেকে পড়ে যেয়ে আহত হয়। এই সড়কে চলন্ত গাড়ি থেকে অনেকেই ছিটকে পড়ে আহত হয়েছেন।

আরও অনেকে বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সময় মত কাজ করতে বিলম্ব করছেন। যে কারণে সড়কটি আবার খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কাজের ধীরগতির কারণে পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে বিড়ম্বনা।

দেখা গেছে, ফেরিঘাট থেকে সিংগাড়ী হয়ে নড়াইলের জেলার সদর, কালিয়া উপজেলা সহ চাকই, রুখালী, খড়েলা, মির্জাপুর, সিংগাড়ী, বাঘুটিয়া, পাচুড়িয়া, আমতলা ও ফুলতলা হয়ে খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার একমাত্র পথ হিসেবে এই রাস্তাটি ব্যবহার করে সাধারন যাত্রীরা। রাস্তা সংলগ্ন কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যাতায়াতের সময় পড়ছে চরম বিপাকে।

এ পথেই রয়েছে সিংগাড়ী বাজার, ইছামতি বাজার, চাকই বাজার, ভাটপাড়া বাজার, নাউলি বাজার, শংকরপাশা বাজার, হিদিয়া বাজার, বাশুয়াড়ি বাজার সহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় বাজার। এই সমস্ত বাজারে যাতায়াতের জন্যে ঐ এলাকার মানুষ সড়কটি ব্যবহার করে। রাস্তার দুই পার্শ্বে রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ এবং মন্দির।

সূত্র জানায়, এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কাছ থেকে উপ ঠিকাদার হিসাবে মোড়লগঞ্জের মুস্তাফিজুর রহমান ও সুমন খাঁন নামে দুইজন ঠিকাদার সড়কটি মেরামতের কাজ করছেন। কার্যদেশ পাওয়ার পর দীর্ঘ ১০ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি। এ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক (ওয়াটার মিক্সড মেকাডম) খোয়াবালি দিয়ে সমান করা হয়েছে। এছাড়া শংকরপাশা থেকে আমতলা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট মাটি খুড়ে বালি খোয়া দ্বারা ভরাট করা হয়েছে। বাকি প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। ঠিকাদার বলছেন, সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন কাজ ধীরগতিতে চলছে। বরাদ্দ না বাড়ানোর করণে মাঝে মাঝে কাজ করে দেয়া হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ভৈরব নদের পূর্ব তীরে অবস্থিত সড়কটি ৮ বছর মেরামত না করায় বেহাল অবস্থা। সড়কটি মেরামতের জন্যে বরাদ্দ হয়। সড়কটির দৈর্ঘ ২০ কিলোমিটার ৯৪৪ মিটার ও প্রস্ত ১২ ফুট। বর্তমানে ওই সড়কটি ১৮ ফুট প্রস্তের উন্নয়ন করা হচ্ছে। এতে বরাদ্দ হয় ২৬ কোটি আট লাখ তিন হাজার টাকা। দরপত্র আহ্বানের পর নিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়রে জন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন ঢাকার এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মালিক মহিউদ্দীন মঈন। প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয় ৪ এপ্রিল ২০২১ থেকে ১০ অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত।

বাস চালক আবুল হোসেন বলেন,‘ ঠিকাদার কাজ না করে বসে আছে। রাস্তায় খানাখন্দে ভরা যে কারণে আমাদের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ বেড়ে যায়। ইটখোয়া উঠে যাওয়া ওই রাস্তায় কাদায় ভরে যায়। সে দিন আর গাড়ি চালানো যায় না।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শংকরপাশা থেকে ইছামতি স্কুল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে ৬ফুট মাটি খুঁড়ে ইটখোয়া দ্বারা ভরাট করা হয়েছে। আমতলা থেকে ইছামতি পর্যন্ত ৫/৬ কিলোমিটার রাস্তা বুলডেজার ইটখোয়া দ্বারা সমান করা হয়েছে। বাকি সড়কের প্রায় সকল স্থানে খানাখন্দে ভরা।

ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা কাদের আলী বলেন, ‘ঠিকাদার ঠিকমত কাজ করেন না। ১৫/১৬ দিন আগে দুই ট্রাক খোয়া স্কুলের সামনে ফেলে গেছে। সেই থেকে কাজ বন্ধ আছে। এভাবে মাঝে মাঝে কাজ করে। ওদের কাজের কোন গতি নেই।’

সড়ক মেরামতে নিযুক্ত সহকারি ঠিকাদার সুমন খাঁনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়কটি বেহাল অবস্থা হয়ে যাওয়ায় সিডিউল যা করা হয়েছে সেভাবে কাজ করলে সড়ক টিকবে না। যেখানে দেড় কিলোমিটার প্যালাসাটারিং দেয়া লাগবে সিডিউলে সেখানে মাত্র ৬শ মিটারের কথা উল্লেখ আছে। সড়েকটিতে কার্পেটিং, ইট খোয়া উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। সেখানে পুনর্নির্মাণ না করে মেরামত করা যাবে না। এজন্যে আমরা টাকার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি করেছি। আমাদের দাবি অনুযায়ী অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্যে স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস থেকে ফাইল পাঠাতে দেরি করছে। আমরা অতিরিক্ত বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করলে বিল পাবো না। যে কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৮ কোটি টাকার কাজ করে মাত্র দুই কোটি টাকার বিল পেয়েছেন।

ঢাকার এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মালিক মহিউদ্দীন মঈনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা ওই সড়কটি সময় মত কাজ করে দেব।

উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হক বলেন, অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ না পেলেও কাজ বন্ধ রাখার এখতিয়ার ঠিকাদারের নেই। কোন অযুহাতে কাজ বন্ধ রাখতে পারবে না ঠিকাদার। বিষয়টি আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

খুলনা গেজেট/ এস আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!