ঘূর্ণিঝড় মোখা গেলেও যশোর অঞ্চলে এখনও কমেনি গরমের তীব্রতা। আর এই তীব্র গরমের মধ্যে একটু স্বস্তি পেতে শৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে মধু মাসের ফল তাল শাঁসের কদর বেড়েছে। সহজলভ্য ও মুখরোচক হওয়ায় তালের শাঁস বিভিন্ন বয়সী মানুষের পছন্দ। তালের নরম কচি শাঁস খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বর্তমানে এর চাহিদাও বেড়েছে।
অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারের হাইস্কুল গেট, উপজেলা মোড়, স্বাধীনতা চত্বরসহ বিভিন্ন মোড়ে বিক্রেতারা এখন বিক্রি করছেন তাল শাঁস। কোনো কোনো বিক্রেতারা ভ্যানযোগে পাড়া ও মহল্লায় ঘুরে তাল শাঁস বিক্রি করছেন।
সোমবার নওয়াপাড়া বাজারের হাইস্কুল গেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, তাল শাঁস বিক্রি করছেন উপজেলার এক্তারপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম। তিনি জানান, প্রতি বছর মধু মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তাল কেনেন। পরে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে তা বিক্রি করেন। প্রতি বছরই এ সময় তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। যদিও পেশায় তিনি একজন কাঠমিস্ত্রী। বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠের অর্ধেক সময় পর্যন্ত চলবে তালের শাঁস বিক্রি। তবে এবারে ফলন কম হওয়ায় দাম কিছুটা বাড়তি বলেও জানান তিনি।
অপর বিক্রেতা রানা জানান, এক একটি তাল গাছ ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় সিজন হিসেবে কেনেন। পরে গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করে ভ্যানযোগে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বিক্রি করেন। ভালো ফলন হলে সেই গাছের তাল বিক্রি করে দুই থেকে চার হাজার টাকা আয় করা যায়। এছাড়া প্রচণ্ড গরম থাকায় তাল শাঁসের চাহিদা রয়েছে বেশি। প্রতিটি তাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা, কাধি ধরে নিলে ৮ টাকা এবং শাঁসের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়। প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ তাল শাঁস বিক্রি হয় বলে জানা যায়।
অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, অনেক ক্রেতা পরিবারের সদস্যদের জন্য পীর (এক ছড়া) হিসেবে তাল শাঁস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। চাহিদা থাকলেও ফলন কম হওয়ায় এবার বিক্রিতে তেমন সময় লাগছে না জানিয়ে তাল শাঁস বিক্রেতারা ইউসুফ আলী,শরিফুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন জানান, সৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, পথচারীরা প্রচণ্ড গরমে একটু স্বস্তি পেতে ভিড় করছেন তাল শাঁস বিক্রেতাদের কাছে।
ক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি হলেও এটা মৌসুমি ফল হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর ও ভেজালমুক্ত ফল। এ কারণে নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সবার জন্যেও নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে গাছের মালিকরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাছে ফলের সংখ্যা কমে গেছে। তাই তালের সরবরাহ কমে যাচ্ছে। তবে নতুন গাছগুলো বড় হলে এবং ফলন ধরলে এ মৌসুমি ফলের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কমকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, তাল গাছ লাগানো জন্য প্রতিটি এলাকার চাষীদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তালের শাঁসের বেশ কদর। দামও এ বছর বেশি।
খুলনা গেজেট/ এসজেড