খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৫ মে, ২০২৪

Breaking News

  মিল্টন সমাদ্দারের প্রতারণায় সহযোগী ছিলেন তার স্ত্রী : ডিবি প্রধান
  জনগণের ভরসাস্থল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন সেনাবাহিনী : প্রধানমন্ত্রী

অধিকার বনাম প্রাপ্তি : অঙ্ক না জানা পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজ

মোহাম্মদ সাদউদ্দিন, কলকাতা

২০২১ সালে তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.৮৯% ভোট অর্থাৎ প্রায় ৪৮% ভোট । তৃণমূলের প্রাপ্ত আসন ২১৩ টি ।

i) তৃণমূলের প্রাপ্ত ৪৮% ভোটের মধ্যে মুসলিম ভোট প্রায় ৩৩%। এই তথ্যের প্রমাণ কী আছে? মুর্শিদাবাদের ভোটের রেজাল্ট দেখুন। সেখানে মোট অমুসলিম ভোটের ১৫% ভোটও তৃণমূল পায়নি। নন্দীগ্রামের ভোটের রেজাল্ট দেখুন সেখানে মুসলিম ভোটের প্রায় ৯৪% ভোট তৃণমূল পেয়েছে।

ii) তৃণমূলের প্রাপ্ত ৪৮% ভোটের মধ্যে অমুসলিম ভোট প্রায় ১৫%। প্রমাণ কী আছে? উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদাসহ বিভিন্ন জেলার ভোটের রেজাল্ট দেখলে তা প্রমাণ পেয়ে যাবেন ।

iii) অনেকে বলছেন এ রাজ্যে বিজেপির ভোট কমেছে। বিজেপির ভোট খুব বেশি কমেনি। ২০১৯ সালে বিজেপির ভোট ছিল ২,৩০,২৮,৫১৭ (৪০.৭%) টি। ২০২১ সালে বিজেপির ভোট ২,২৮,৫০,৭১০ (৩৮.৫২%) টি। বিজেপির ভোট কমেছে মাত্র ১,৭৭,৮০৭ (২.১৮%) টি।

এবার আসা যাক পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও প্রাপ্তির হিসাবে। তৃণমূলের ১০০ টি ভোটের মধ্যে প্রায় ৭০ টি মুসলিম ভোট ও অমুসলিম ভোট প্রায় ৩০ টি।

১) তৃণমূলে ৩৩% মুসলিম ভোট প্রয়োগ করে মুসলিম বিধায়ক প্রাপ্য ছিল ১৪৭ জন। সেখানে মুসলিম বিধায়ক মিলেছে মাত্র ৪৩ জন। এর থেকে চরম দাসত্ব কী হতে পারে?

২) তৃণমূলে ১৫% অমুসলিম ভোট প্রয়োগ করে অমুসলিম বিধায়ক প্রাপ্য ছিল ৬৬ জন। সেখানে অমুসলিম বিধায়ক হয়েছে ১৭০ জন। বিজেপিও বোধ হয় অমুসলিমদের এতো উপকার কখনো করে দিতে পারবে না।

৩) বিধায়ক প্রাপ্তির নিরিখে রাজ্য সভার এম পি নির্বাচিত হয়। সেক্ষেত্রে রাজ্য সভায় তৃণমূল দল থেকে ৮ (আট) জন মুসলিম এম পি হওয়ার কথা। সেখানে রাজ্য সভায় তৃণমূল দল থেকে মাত্র ২ জন মুসলিম এম পি।

এই অংক বলে দেয় শুধু ভারত নয় পৃথিবীর ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের রাজনৈতিক দুর্বলতা চরম লজ্জাজনক। কেরলে মুসলিম বিধায়ক বেড়েছে ৩ জন। আসামে মুসলিম বিধায়ক বেড়েছে ২ জন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম বিধায়ক কমেছে প্রায় ১৪ জন (যদিও এখনও দুটি মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন বাকি আছে)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির ভয় দেখিয়ে বাংলার মুসলমানদের চরম বঞ্চিত করছে তা তথ্য দেখলে বুঝতে পারবেন। তিনি সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা দপ্তরের প্রধান থেকে এ রাজ্যের ৬১৪ টি মাদ্রাসার মধ্যে ৩৩৭ টি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক নেই। দশ বছরে মাদ্রাসায় একবার মাত্র শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। তিনি ইচ্ছা করেই মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা করে রেখেছেন। তাঁর এলএলবি করা আছে, তিনি নিশ্চয় জানেন মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ কারা করবে? ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসায় ভূগোল বিষয়ে ১২ জন শিক্ষকের ১২ জন অমুসলিম শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। ১২ জন বাংলা শিক্ষকের ১১ জন অমুসলিম শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। তাঁর দলের রাজ্য সভার অনেক এমপি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে কোনো মুসলিম ছাত্র ভর্তি করান না। এরকম বহু বঞ্চনা আছে …।

লেখাপড়া না জানা মুসলমানদের কথা ছেড়েই দিলাম। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত মুসলমানরা এই হিসাব বুঝতে চায় না। ইমাম, যারা মুসলিম সমাজের দিশা দেখাবে তারা পর্যন্ত দাসত্ব মেনে নিয়েছে। বিজেপি ভীতি এদের চিন্তাশক্তিকে ভোঁতা করে দিয়েছে। যাঁরা পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের পথ দেখাবে তাঁদের ভীরুতা আর স্বার্থপরতা প্রায় ৩০% মুসলমানদের কপালে দাসত্বের ইতিহাস লিখে দিয়েছে।

মুক্তির উপায় কি নেই? আছে। প্রয়োজন রাজনৈতিক চর্চার। মৌলিক রাজনীতির মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। সব আসনে প্রার্থী নয়, ২০% আসনে প্রার্থী দিয়ে অধিকার অনায়াসে আদায় করা যায়। স্থান কাল পাত্র ভেদে রাজনীতি করলে সেটা সম্ভব। তৃণমূলের হয়ে লেখার মুসলমান পাবেন হাজার হাজার। মোদির বিরুদ্ধে লেখার মুসলমান পাবেন লক্ষ লক্ষ। আর রাজনৈতিক আত্মসমালোচনামূলক লেখার মুসলমান গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে দশ জনও পাবেন না। আপসোস হয়। যারা চর্চা করে না তাদের বিকাশ নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা আসমান থেকে ফেরেস্তা মারফত পাঠিয়ে দেবেন না।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!