শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
খুলনা ১ আসন

জামায়াতের কৃষ্ণ নন্দীকে নিয়ে নানা আলোচনা

গেজেট প্রতিবেদন

হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত প্রার্থী করেছে জামায়াতে ইসলামী। এনিয়ে নানা আলোচনা চলছে ভোটারদের মাঝে। বিষয়টিকে কেউ ইতিবাচক দেখলে, সমালোচনাও করছেন কেউ কেউ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে দলের মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানকে এবারও প্রার্থী করা হয়েছে। বিএনপি’র শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিপরীতে কৃষ্ণ নন্দী কতটা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসতে পারবেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে ভোটারদের মাঝে।

দাকোপ ও বটিয়াঘাটা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে ভোটার তিন লাখের কিছু বেশি। এর ৪৩ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। অংশগ্রহণমূলক প্রতিটি নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিলেন। সে কারণে আসনটিতে প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিন্দু নেতাদের অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিল সব দল। প্রথম পর্যায়ে বিএনপি আসনটিতে প্রার্থীতা স্থগিত রাখে। জামায়াত প্রার্থী করে বটিয়াঘাটা উপজেলা আমির মাওলানা আবু ইউসুফকে। পরে তাকে পাল্টিয়ে ৩ ডিসেম্বর কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়।

দাকোপের চালনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বারুইখালী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ও হিন্দু নেতা রবি শংকর রায় বলেন, “দল বা সম্প্রদায় দেখে নির্বাচনে কাউকে বিচার করা সঠিক নয়। দেখতে হবে সেই প্রার্থীর আচার-ব্যবহার ও মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা আছে কি-না?”

তিনি আরও বলেন, “আমি এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে কখনো দেখিনি। তাকে চিনি না। তিনি এলাকায়ও কখনো আসেননি। তবে তিনি যদি এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন, মানুষের মন জয় করতে পারেন-তাহলে তাকে ভোট দিতে আমরা দ্বিধা করবো না।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। তার বাবা-দাদা জন্মও সেখানে। লেখাপড়া করেছেন চুকনগর দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তার বাবা মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। লেখাপড়া শেষ করে পারিবারিক মটর সাইকেল, তেল, রড-সিমেন্ট ও টিনের ব্যবসার হাল ধরেন কৃষ্ণ নন্দী। ২০০৩ সালে ওই আসনে জামায়াতের এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ারের হাত ধরেই জামায়াতে যোগ দেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্থানীয় এমপি ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তার সঙ্গে নানান কর্মসূচিতে কৃষ্ণ নন্দীর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর গতবছর ৫ আগস্ট কৃষ্ণ নন্দীর বাড়িতেও হামলা ও লুটপাট হয়েছিল। মূলত এরপরই তিনি জামায়াতে পুনরায় সক্রিয় হন। তাকে উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি করে জামায়াত। গত ৩১ অক্টোবর জামায়াতে হিন্দু সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দেয়।

অবশ্য কৃষ্ণ নদী বলেন, “ব্যবসায়ী হিসেবে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ঘনিষ্ঠ বলতে যা বোঝায়- তেমন কখনো ছিল না। মন্ত্রী হওয়ার পর তাকে একদিন ফুল দিয়েছিলাম, সেই ছবি এখন ছড়াচ্ছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগ বা মন্ত্রীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক প্রমাণ করতে পারলে জামায়াত ছেড়ে দেব।”

তিনি আরও বলেন, “দাকোপ-বটিয়াঘাটায় আমার প্রচুর আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। তারাই আমার পক্ষে কাজ করছেন।”

জামায়াতের মতো ধর্মভিত্তিক দলের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ধর্মীয় বলা হলেও জামায়াত হিন্দু-মুসলিম সবার কাছে আস্থাশীল। সবাই তাদের কাছে সুরক্ষা পাবে। সেজন্য জামায়াতে যোগ দিয়েছি, সেটাই ভোটারদের বলবো।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন