রফিকুল আলম বাবু

‘কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়ে অনেক প্রবীণ ও দুঃসময়ের সাথীকে দলের বাইরে রাখা হয়েছে’

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন সাতক্ষীরা শহরের নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা রফিকুল আলম বাবু। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠার পর তিনি বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। শুরু থেইে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি। নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। দলের প্রতি আনুগত্যের কারণে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বহুবার জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারপরও হাল ছাড়েননি, ৪৭ বছর ধরে দলের সাথে আছেন। আমৃত্যু দলের জন্য কাজ করে যেতে চান এই জিয়া সৈনিক।

একান্ত আলাপচারিতায় বিএনপি নেতা রফিকুল আলম বাবু বলেন, আমি সাতক্ষীরা কলেজ (বর্তমানে সরকারি কলেজ নামে পরিচিত) থেকে বি.কম. পাশ করি। মাঝখানে কিছুদিন খুলনা আযম খান কমার্স কলেজে পড়ালেখা করেছিলাম। ছাত্র জীবনে ভাসানী ন্যাপের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, সেসময় ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। আমরা যারা সাতক্ষীরার ভাসানী ন্যাপ করতাম তখন ১৯৭৭ সালে বিচারপতি ছাত্তারের নেতৃত্বে জাগদল সৃষ্টি হলে আমরা প্রায় সবাই সেখানে সামিল হয়ে যাই। তখন আমি জাগ যুবদলের সাতক্ষীরা জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি।

বিএনপির রাজনীতিতে কিভাবে এলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর যুবদল সৃষ্টি হলে আমি যুবদলে যোগ দেই। সে সময় আমি সাতক্ষীরা জেলা যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। দীর্ঘ ১৬ বছর অত্যন্ত সুনামের সাথে আমি সাতক্ষীরা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। পরবর্তীতে ২০০১ সালে আমি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। মাঝে কিছুদিন আমি জেলা তাঁতি দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। এই দীর্ঘ সময়ে আমি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি।

বর্তমানে দলের সাথে কোন অবস্থানে আছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আলম বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে আমি দলের কোন অবস্থানেই নেই। কারণ বিগত ২০২১ সালের পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির একটি পক্ষ কেন্দ্রকে আমার বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে অভিযোগ করে। যেকারণে আপাতত আমাকে দলের বাইরে রাখা হয়েছে। বিষয়টি আমি নিজে বর্তমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করলে তিনি আমাকে একটি দরখাস্ত দিতে বলেন। দরখাস্ত পেলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। কিন্ত্র অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে কোন পদে না থাকলেও আমি দলের সাথে আছি। শহিদ জিয়ার আদর্শকে বুকে ধারণ ও লালন করে চলি। শুধু একারণে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমাকে অনেক জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। বহু রাত গেছে বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি, পরিবারের সাথে থাকতে পারিনি।

দল নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সাতক্ষীরায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সেটা করে উঠতে পারিনি। জাগদল থেকে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর আমরা যারা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিতে আসি তাদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে মারা গেছেন। যারা এখনো বেঁচে আছেন তারা প্রায় সবাই দলের কাছে এখন অবহেলিত। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ভুল বুঝিয়ে অনেক প্রবীণ ও পোড় খাওয়া এবং দলের দুঃসময়ের সাথীকে বাইরে রাখা হয়েছে। বর্তমানে যারা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে আছেন তারা অধিকাংশই নবীন। সাতক্ষীরায় দলীয় কোন্দলের কারণে অধিকাংশ প্রবীণ রাজনৈতিক নেতাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এদেরকে দলে ফিরিয়ে এনে মূল্যায়ন করতে পারলে সাতক্ষীরায় বিএনপি আরো উপকৃত ও সুসংগঠিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

দলের কোন পদে যাওয়ার সুযোগ পেলে কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে আমি যদি কোন দায়িত্ব পাই তাহলে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে দলকে সুসংগঠিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। দলীয় কোন্দলের কারণে সাতক্ষীরার অনেক পুরানো নেতাকর্মী দলের বাইরে রয়েছেন। তাদেরকে পুনর্বাসিত করে দলীয়ভাবে মূল্যায়ন করলে সাতক্ষীরায় বিএনপি আরো বেশি সংগঠিত ও শক্তিশালী হবে। সুযোগ পেলে তিনি সেই চেষ্টাই করবেন। তবে দলীয় কোন পদ বা দায়িত্ব না পেলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শহিদ জিয়ার আর্দশকে লালন করে যাবেন বলে জানান তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন