শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে আটদিন পণ্য রফতানি বন্ধ রাখবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে চাল আমদানির মেয়াদ। এমন পরিস্থিতিতে এলসি করা চাল দেশে আনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমদানিকারকরা।
এদিকে সময়সীমা ঘনিয়ে আশায় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানির হিড়িক পড়েছে। বেড়েছে ভারতীয় গাড়ির চাপও। তবে নির্ধারিত সময়ে চাল আনতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দিহান ব্যবসায়ীরা।
সাতক্ষীরার ভোমরা কাস্টমসের তথ্যমতে, দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য নির্বাচিত ২৪২টি ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৪ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ৩৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল মিলে মোট ৫ লাখ মেট্রিক টন বরাদ্দ প্রদান করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী গত ১৯ আগস্ট থেকে এই বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়। ফলে ১৯ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৯ দিনে ভারতীয় ২ হাজার ৪৭৪টি ট্রাকের মাধ্যমে ৯৫ হাজার ৭২১ দশমিক ৬৩৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত দেশের শীর্ষ ৭৩টি চাল আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান ভোমরা বন্দর দিয়ে এই চাল আমদানি করে।
ভোমরা বন্দরের চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা মনি ট্রেডার্সের মালিক মনিরুল ইসলাম জানান, “সরকার অনুমতি দেয়ায় ১৯ আগস্ট থেকে ভোমরা দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমদানির সময়সীমা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু দুর্গাপূজায় ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ রাখবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।”
তিনি আরও বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত চালের আমদানি বাড়ছে। তবে নির্ধারিত সময়ে এলসি করা চাল এনে শেষ করতে পারবেন কি না, ব্যবসায়ীরা সেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সরকার চাল আমদানির সময়টা বাড়ালে আমাদের জন্য ভালো হতো।”
ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক অব্দুল গফুর সর্দার জানান, দীর্ঘ চার মাস বন্ধ থাকার পর ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ১৯ আগস্ট থেকে ভারতীয় চাল আমদানি শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা তাদের নির্ধারিত বরাদ্দের চাল আমদানি করতে পারবেন। কিন্তু দুর্গাপূজার ছুটির কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এলসি থাকার পরও বরাদ্দের চাল আমদানি করতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা। নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্দরের কার্যক্রম বন্দ হওয়ার ঘোষণায় ব্যবসায়ীরা দ্রুত তাদের এলসির চাল আমদানিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এজন্য সাম্প্রতিক সময়ে ভোমরা বন্দরের চালের গাড়ি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, “চাল আমদানির সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু দুর্গাপূজার কারনে ২৬ সেপ্টেম্বরই শেষ হচ্ছে আমদানি। এ সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীদের এলসি করা চাল যেন দেশে প্রবেশ করতে পারে, তার জন্য শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন আমদানি-রফতানি চালু রাখার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হবে।”
ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এ বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়। গত ১৯ আগস্ট থেকে আবারো চাল আমদানি শুরু হয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ২৯ দিনে ২ হাজার ৪৭৪টি গাড়িতে করে মোট ৯৫ হাজার ৭২১ দশমিক ৬৩৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। প্রতিদিনই চালের গাড়ি ঢুকছে। পূজার ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকার ঘোষণায় চাল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম