সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে বন বিভাগ। অভয়ারণ্য ঢুকে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে সুন্দরবনের বিভিন্ন অভয়ারণ্য, খাল ও নদীতে টহল দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানান সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।
বনবিভাগের সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে কিছু অসাধু চক্র মাছ ও কাঁকড়া শিকার করছে। আবার কেউ কেউ বিষ ব্যবহার ও জাল ফেলে মাছ আহরণ করছে। এ ছাড়া বনাঞ্চলের ভেতরে ঢুকে বন্যপ্রাণী শিকার করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অনিয়ম ও অপরাধ বন্ধ করতেই এ বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযান চলাকালে বনরক্ষীরা সন্দেহভাজন নৌকা ও জাল বাজেয়াপ্ত করেন এবং বনাঞ্চলে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের সতর্ক করে দেন। আটক কিছু জেলেকে বন আইনের আওতায় মামলা দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম বনবিভাগের আওতাধীন বুড়িগোয়ালিনী এলাকার একজন জেলে বলেন, “সুন্দরবনের বেশি ভাগ ক্ষতির কারণ কিছু দালান চক্র ও কোম্পানি। এদের সাহসে যত অপকর্মে লিপ্ত হয় কিছু জেলে। তাদের দাবি সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে হলে দালাল ও কোম্পানিদের অপসারণ করতে হবে।
নীলডুমুর এলাকার মোজাম্মেল হক বলেন, “কিছু অসাধু কোম্পানি এবং জেলেদের কারণে নিরীহ জেলেদের উপর চাপ না পড়ে সে বিষয়ে বনবিভাগের কাছে আমাদের আহবান। আমরা চাই অবৈধ ব্যবসায়ী এবং অবৈধ জেলেদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হোক।”
স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে বনে ঢোকার জন্য জেলে বাওয়ালিদের পাশ ইস্যু করা শুরু হয়। শুরু থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন চারটি স্টেশন থেকে মোট ২২৮৫ টি পাশ ইস্যু করা হয়েছে। এসব পাস নিয়ে জেলেরা ইতিমধ্যে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরতে চলে গেছে। তবে অবৈধভাবে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের ঢুকে মাছ শিকারের অভিযোগে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন জেলেকে আটক করা হয়েছে। এসময় জব্দ করা হয়েছে নৌকাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম। মামলা দিয়ে এসব জেলেদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
পশ্চিম বনবিভাগের সরকারি বন সংরক্ষক ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষা এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি চিরুনি অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া জেলেদেরও সচেতন করা হচ্ছে যেন তারা বৈধ পাস পারমিট ছাড়া সুন্দরবনে প্রবেশ না করে এবং কোনোভাবেই ক্ষতিকর পদ্ধতিতে মাছ শিকার না করে।
স্থানীয় সচেতন মহল বনবিভাগের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “নিয়মিত এ ধরনের অভিযান চালানো হলে সুন্দরবনের সম্পদ ও বন্যপ্রাণী অনেকাংশেই সুরক্ষিত থাকবে।”
খুলনা গেজেট/এনএম