সাতক্ষীরার শ্যামনগরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান বাঁধ নির্মাণের মেগা প্রকল্পের কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে না পারলে এই মেগা প্রকল্প কোনো কাজেই আসবে না বলে দাবি তাদের। এতে পানিতে যাবে সরকারের হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প।
সোমবার (১১ আগস্ট) শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা মোঃ রুস্তম আলী, মাহফিজুর রহমান বাবু, প্রমথ মহালদার ও সুজন মন্ডল এসব দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, প্রতিদিনই অবৈধভাবে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধ বালুখেকোদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ভাঙনমুখ থেকে বালু উত্তোলনে স্থানীয় নৌ থানার পুলিশ তাদের সহায়তাও করছে।
এসময় আরো অভিযোগ করা হয়, শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালীনি, কৈখালী, আটুলিয়া ও কাশিমাড়ী এলাকা তীব্র ভাঙন প্রবণ। এ কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলা ১৪৩২ সালের জন্য এসব এলাকার কোন চরকে বালুমহাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। বরং সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ সচল রাখতে পার্শ্ববর্তী আশাশুনি উপজেলার হিজলিয়া চরের পাঁচ একর জায়গাকে বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বালুমহাল ইজারা পেয়েছেন আ’লীগ দলীয় সাবেক এমপি জগলুল হায়দারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রহমান বাবু ও শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙুর।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট বালু মহাল অনেক দূরে হওয়ার কারণে বালুখেকো বাবু ও আঙুর শ্যামনগরের দুগার্বাটি, জেলখালী, ঝাপা, বিড়ালাক্ষ্মী, জেলিয়াখালীসহ ভাঙন কবলিত বিভিন্ন অংশ হতে বালু উত্তোলন করছেন। স্থানীয়রা বাধা দিলেও তারা মানছেন না, উপরোন্ত চাঁদাবাজির মামলায় জড়ানোর ভয় দেখাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও অভিযোগ করেন, রাতের আধাঁরে ৩০/৩২টি বোট, কার্গো ও বডি দিয়ে বালু লুট করা হচ্ছে। এসময় বুড়িগোয়ালীনি নৌ-থানার ওসিকে জানানো হলে তিনি কোন ধরনের পদক্ষেপ নেন না। বরং নানা টালবাহানা করে তিনি বালুখোরদের বালু উত্তোলনে সহায়তা করছেন।
সংবাদ সম্মেলন দাবি করা হয়, উপকূলবাসীর সুরক্ষার জন্য টেকসই বাঁধ নির্মিত হচ্ছে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। কিন্তু নির্মাণাধীন সেই বাঁধের পাশের নদী থেকে যদি আবারও ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করা হয় তবে অচিরেই এসব এলাকার বাঁধে ভাঙন দেখা দেবে। সেজন্য তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না করা গেলে বাঁধের কাজ স্থগিত রাখার দাবি জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম আঙুর জানান, আমার লোকদের নিষেধ করা হলেও তারা মাঝেমধ্যে এমন ভুল করছে। নির্দিষ্ট চর কিছুটা দূরে হওয়ায় অনেক সময় কিছু বোট মালিক এমন দুষ্টামি করে। তাদেরকে নিষেধ করা হবে।
বুড়িগোয়ালীনি নৌ থানার ওসি আসাদুাজ্জামান জানান, আমরা প্রতিনিয়ত অনেক অভিযোগ পায়। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া আমারা মুভ করতে পারি না। আবার কোন কোন সময় অভিযান পরিচালনার খবরে আগেই তারা পালিয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজা জানান, ভাঙনকুল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে অবশ্যই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বাঁধের সুরক্ষার জন্য আইনী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সুপারিশ করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন জানান, ইতিমধ্যে তিনি নিজে একটি অভিযান পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পাশ থেকে পুনরায় বালু সংগ্রহের কোন সুযোগ নেই। যারা এমন কাজ করবে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
খুলনা গেজেট/এসএস