ঘেরের পানিতে ছুটে চলেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। আর পানির উপরে মাচায় ঝুলছে শত শত তুরমুজ। এ যেনো এক মন ভাল করা দৃশ্য। বলছিলাম সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটায় অফসিজনের তরমুজ চাষের কথা। যা সাড়া ফেলেছে কৃষকদের মাঝে। অল্প খরচে এ তরমুজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৎস্য ঘেরের ভেঁড়িতে পতিত জমি হিসাবে পরীক্ষামূলকভাবে এ তরমুজের চাষ শুরু হয়। যা বর্তমানে সফলতা পেয়েছেন অনেক কৃষক।
দেবহাটা উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর প্রায় ৫০ জন কৃষক এই তরমুজ চাষের সাথে যুক্ত হয়েছেন। চাষের জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন হচ্ছে না। মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে খুব সহজে চাষ করা যাচ্ছে এই তরমুজ। অল্প দিনে লাভের মুখ দেখায় প্রতিবছর চাষের পরিমাণ বাড়ছে। এবছর উপজেলার ৩টি প্রদর্শনীতে ইতোমধ্যে বাম্পার ফলন এসেছে।
এছাড়া কৃষি অধিদপ্তর থেকে ৫০ জন কৃষকের মাঝে তরমুজের বীজ প্রদান করা হয়। যার মধ্যে উন্নত জাতের সুপ্রিম হানি, তৃপ্তি, ব্লাক বেবি, সুগারকুইন ও বাংলা লিংক রয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম বীজ রোপণ করা যায়। অপসিজন তরমুজ বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা হচ্ছে। অনেক তাদের ঘেরের নিজস্ব জমিতে এই তরমুজের চাষে ঝুঁকছে।
উপজেলার টিকেট গ্রামের তরমুজ চাষি বিশ্বনাথ টাপালী জানান, মিষ্টি পানিতে যেভাবে একটা ফসল ফলানো যায়। লোনা পানিতে টিউবওলের পানি বালতিতে বয়ে নিরন্তর পরিচর্যার মাধ্যমে রোগ বালাই পোকামাকড় দমন করা হয়। এভাবে একটা ফসল ফলানো খুব দুরূহ। এটার মূল্যায়ন সবাই করতে পারে না। অসমেয়র তরমুজের প্রথম চালান ৪০হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। এখনও দুইবার ফলন তোলা যাবে। আমি মোট ৬ বিঘা জমির ভেড়িতে লাগিয়েছি। আশাকরি তরমুজ বিক্রি করে সারাবছরের জমির হারির টাকা উঠে যাবে।
কৃষক আবুল কাশেম বলেন, এই তরমুজ দেখতে যেমন চমৎকার তেমন খেতেও অনেক মিষ্টি। বাজারে অনেক চাহিদা আছে। তিনি আশা করছেন প্রায় ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করবেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা মোস্তাক আহম্মেদ জানান, নোনাতে সোনার খোঁজে, দেবহাটা কৃষি পরিবার। সেই লক্ষে মাঠ পর্যায়ে অপসিজন তরমুজ চাষের প্রথমে আগ্রহ না থাকলেও এখন চাষিদের মাঝে সাড়া পড়েছে। আমাদের সর্বচ্চো চেষ্টার মাধ্যমে মৎস্যঘের বা পতিত জমি কৃষির আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান জানান, বিগত দিনে যেখানে মাছের ঘেরের ভেড়ি চাষের আওতায় ছিল না, সেখানে আমরা ওই জমিগুলো চাষের উপযোগী করেছি। বিশেষ করে সবজি ও অসময়ের তরমুজ চাষে দেবহাটা উপজেলায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে বীজ, সার সরবাহ ও নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কোন ভূমি যাতে না পড়ে থাকে সে জন্য আমাদের দপ্তরের থেকে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে করে উপজেলা কৃষির আবাদ বেড়েছে সেই সাথে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।
খুলনা গেজেট/এএজে