আষাড়-শ্রাবণের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় বর্ষাকালিন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। যে কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই বাজারে সব ধরনের সবজির দাম চড়া। সরবরাহ কম থাকায় বাজারে প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে। হঠাৎ সবজির দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
শনিবার (৯ আগষ্ট) সকালে সাতক্ষীরার শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি সবজির আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বেগুন প্রকার ভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ওল দেশি ৭৫ থেকে ৮০, ওল ম্যাদ্রাজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, কচুরমুখি ২৮ থেকে ৩৫ টাকা, কচু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কাঁচাকলা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, এক কেজি ওজনের পুইশাক এক আটি ৪০ টাকা, লাল শাক এক আটি ১২ থেকে ১৫ টাকা, লাউ এক পিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, ঢেড়স ৫০ টাকা, উচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, আমড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা, সুন্দরবনের কেওড়া ফল ২০ থেকে ২৫ টাকা, টমেটো ১৩০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে শসা বা খিরাই এর দাম কিছুটা কমেছে। কয়েক দিন আগের ৭০/৮৯ টাকা দামের শসা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। তবে খুচরা বাজারে এসব সবজি প্রকারভেদে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবজি কিনতে আসা পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার জিল্লুর রহমান জানান, বড় বাজারে প্রতিটি সবজির দাম অনেক বেশি। প্রায় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি সবজির দাম প্রায় ৫০ টাকার উর্দ্ধে। সরবরাহ কমের অজুহাতে বিক্রেতারা বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন। আসলে সরবরাহের কারণে সংকট কিনা তা মনিটরিং করার দরকার।
মুনজিতপুর এলাকার রিকসা চালক ওয়াজেদ আলী জানান, বর্তমান সময়ে সারদিন রিকসা চালিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রোজগার করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বাজারে গিয়ে সবজির দাম শুনলে মাথায় আর কাজ করে না। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। এই অবস্থায় সবজি কিনলে আর চাল-ডাল কেনার টাকা থাকছে না। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষদের।
সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা মইদুল ইসলাম ও সরোয়ার হোসেন বলেন, সাতক্ষীরাসহ আশেপাশের অঞ্চলে টানা বৃষ্টির কারণে সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় সব ধরনের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। খেতোয়ালরা (কৃষক) আমাদেরকে আর আগের মত সবজি দিতে পারছে না। যে করণে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। তবে আবহাওয়া ভালো হলে সব সবজির দাম কিছুটা কমতে পারে।
পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা গ্রামের টমেটো চাষি রবিউল ইসলাম রবি বলেন, অন্যান্য বছর এসময় আমি প্রায় প্রতিদিন সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজারের আড়তে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি করে টমেটো নিয়ে আসি। কিন্তু এবছর মৌসুমের শুরুতেই ব্যাপক বৃষ্টির কারণে আমার ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে টমেটো ক্ষেতের ক্ষতি হওয়ার কারণে এবার টমেটো বাজারে আনতে পারছি না।
সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি আড়ৎদার মিয়ারাজ হোসেন জানান, অন্য বছর এসময় আমার আড়তে সবজির জায়গা দিতে পারতাম না। আর এবছর তেমন কোন সবজিই নেই। টানা বর্ষার কারণে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষীরা বাজারে সবজি আনতে পারছেন না। তবে কুষ্টিয়া ও রংপুর এলাকা থেকে কিছু কিছু সবজি যেমন লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, পটল, কচুরমুখি, কচু ও পেপে ইত্যাদি আসছে বলে কিছুটা রক্ষা। না হলে বাজারে প্রতিটি সবজির দাম আরও বেশি বেড়ে যেত। সরবরাহ না বাড়া পর্যন্ত সবজির দাম কমবে না বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরার শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের কাঁচাপাকা মাল ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রজব আলী রজো জানান, আষাড়-শ্রাবণের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় বর্ষাকালিন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবজি ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ চাষির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ অনেকাংশে কমে গেছে। যে কারণে বাজারে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম বাড়তির দিকে। বৃষ্টি একটু কমায় চাষীরা নুতন করে সবজি চাষ শুরু করেছেন। আশা করা যায় এমাসের শেষের দিকে বাজারের সবজির সরবরাহ বাড়তে পারে। সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানান এই ব্যবসায়ি।
খুলনা গেজেট/এনএম